দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০০ বিলিয়নে উন্নীত করতে চায় ভারত-রাশিয়া

ফাইল ছবি: রয়টার্স

পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও বাড়াতে চান।

তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে মস্কো গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সফরে পুতিন ও মোদি অঙ্গীকার করেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত-রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে (১০ হাজার কোটি ডলার) উন্নীত করা হবে; বর্তমানে যা ৬৫ বিলিয়ন (৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) ডলার। এর মধ্যে ভারত রাশিয়া থেকে মূলত তেল ও সার কিনবে এবং বিনিময়ে রাশিয়ার কাছে তারা কৃষি ও শিল্পপণ্য বিক্রি করবে বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একদিকে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে, আরেক দিকে ভারতের কৌশলগত প্রতিপক্ষ চীন রাশিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চীনের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে; এই পরিস্থিতিতে ভারত রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কোন্নয়ন করতে চায়।

ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক অনেক পুরোনো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়াকে ভারতের ‘সব সময়ের বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদিকে রাশিয়ার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা অর্ডার অব সেন্ট এন্ড্রু দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সাংবাদিকদের বলেছেন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও গভীর করতে পুতিন ও মোদি দারুণ এক ভিত রচনা করেছেন।

শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইউক্রেন সংকট সমাধানে নরেন্দ্র মোদির প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিনের বাসভবনে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত কোনো পক্ষ নেয়নি; যুদ্ধের সমালোচনাও করেনি। তবে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেছে ভারত। এতে অবশ্য তার লাভও হয়েছে। পশ্চিমারা রাশিয়ার তেল কেনাবেচায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে দেশটি অনেক ছাড় দিয়ে তেল বিক্রি করেছে; এই তেলের বড় অংশ কিনেছে চীন ও ভারত। এ ছাড়া দিল্লির সঙ্গে মস্কোর প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অনেক পুরোনো; রাশিয়া ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ায় এসেছেন—এ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ঈর্ষায় ভুগছে। এর অবশ্য কারণ আছে বলে মনে করেন দিমিত্রি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। বস্তুত রাশিয়ার অর্থনীতির প্রাণ হচ্ছে চীন। সেই সঙ্গে পশ্চিমাদের উৎপাদিত বিভিন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ চীনের মাধ্যমে রাশিয়ায় ঢুকছে; এসব যন্ত্রাংশ যুদ্ধেও ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানা যায়।

বার্লিনের কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক আলেক্সান্ডার গুবিয়েভ বলেন, ভারত রাশিয়াকে জায়গা করে দিতে চায়। রাশিয়াকে চীনের কাছ থেকে সরানোর ক্ষমতা ভারতের নেই। কিন্তু তারা রাশিয়াকে সুযোগ দিতে চায়, যাতে চীনের ওপর তাকে পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে না হয়।

হিমালয় অঞ্চলে সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত। তাই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য রাশিয়ার নিরপেক্ষতা জরুরি বলে মনে করে ভারত। রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘ভারতের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চীন; এই পরিস্থিতিতে আমাদের কোনো বন্ধু শত্রু হয়ে যাবে, এটা আমরা হতে দিতে পারি না।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত-রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেড়েছে। জুন মাসে ভারত যত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে, তার ৪৩ শতাংশই করেছে রাশিয়া থেকে। ফলে চীনের পর রাশিয়ার তেলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্রেতা এখন ভারত।

রাশিয়ার তেলের দাম মূলত রুবলে পরিশোধ করছে ভারত। তারা চেয়েছিল, রাশিয়া যেন রুপিতে ভারতের কাছ থেকে রপ্তানি করে, যদিও শেষমেশ তা পুরোপুরি হয়নি। এদিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরও কড়াকড়ি হওয়ার কারণে রুবল ও রুপির সঙ্গে ডলারে ও ইউরো বিনিময় করা কঠিন হয়ে উঠছে। পুতিনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ম্যাক্সিম ওরেশকিন বলেন, ভারত ও রাশিয়া ইতিমধ্যে বাণিজ্যের ৭০ শতাংশ নিজেদের মুদ্রায় করছে।

এতে অবশ্য রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য–ঘাটতি বেড়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা সাংবাদিকদের বলেছেন, মোদি-পুতিনের বৈঠকে মূলত অর্থনৈতিক বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। পুতিনকে মোদি বলেছেন, বাণিজ্যের আওতা বাড়ানো দরকার।