ভারতীয় ধনীরা যেভাবে বিনিয়োগ করে অভিবাসী হচ্ছেন
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ধনীদের মতো ভারতের ধনীরাও অন্য দেশে অভিবাসী হন। এত দিন তাঁরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ইবি-৫ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। তবে এখন তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও বিনিয়োগের মাধ্যমে অভিবাসী হচ্ছেন। নতুন এসব দেশের তালিকায় আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, গ্রিস ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ভারতে সম্প্রতি ওডিআই বা আউটওয়ার্ড ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট শীর্ষক বিধিমালা করা হয়েছে। এই বিধিমালায় নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক সংস্থায় ভারতীয়দের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই বিধিমালা ভারতীয় ধনীদের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ মাধ্যম খোঁজার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি হুরানি অ্যান্ড পার্টনার্সের অংশীদার সুনিতা সিং–দালাল।
তবে বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান করা। ভারতের আইনি প্রতিষ্ঠান ল কোয়েস্টের ব্যবস্থাপনা অংশীদার পূরবী চোথানি ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, ভারত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আইন বেশ কঠোর। অতি ধনীরা কত অর্থ বিদেশি নিয়ে যেতে পারবেন, তার ওপর প্রায়ই নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। বর্তমানে একজন ব্যক্তি বছরে আড়াই লাখ ডলার বিদেশে নিয়ে যেতে পারেন (লিবারালাইজড রেমিট্যান্স স্কিম-এলআরএস)। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ইবি-৫ ভিসার জন্য যে আট লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, তা জমাতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।
এ ছাড়া পরিবারের কতজন সদস্য নাগরিকত্ব ও স্থায়ী বসবাসের অধিকারের জন্য আবেদন করেছেন, বিষয়টি তার ওপরও নির্ভর করে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওয়াটারফিল্ড অ্যাডভাইজর্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নকুল বেরি বলেছেন, বসবাসের ভিসা সাধারণত পরিবারকে দেওয়া হয়—স্বামী, স্ত্রী ও অনূর্ধ্ব ২৩ বছর বয়সী দুই সন্তানকে। কোনো কোনো দেশ অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানদের অনুমতি দেয়। চারজনের পরিবার জনপ্রতি আড়াই লাখ ডলার অর্থাৎ মোট ১০ লাখ ডলারের বিনিময়ে তা করতে পারে, তবে দুজনের পরিবার হলে দুই মৌসুম লেগে যেতে পারে। একটি বিনিয়োগ মার্চে, আরেকটি এপ্রিলে, তবে যেসব ভিসার জন্য ২০ লাখ, ৫০ লাখ বা ১ কোটি ডলার প্রয়োজন হয়, সেসব ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল হয়।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে উৎসে কর। চলতি অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে সব ধরনের এলআরএস লেনদেনে উৎসে কর ২০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগের ব্যয় বেড়ে যাবে।
নকুল বেরি আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক ভ্রমণও সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেউ বছরে বিদেশ ভ্রমণে এখন লাখ ডলার ব্যয় করলে তা কিন্তু আড়াই লাখ ডলারে সীমা থেকেই কর্তিত হবে। ফলে অর্থ পাঠাতে যথেষ্ট কোটা প্রয়োজন।
বিনিয়োগের মাধ্যমে অভিবাসন ধনীদের বৈশ্বিক পরিসর বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ। তবে সে জন্য অবশ্যই আইনি পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সুনিতা সিং–দালাল। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, নাগরিকত্ব বা স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার পাওয়া অপরিবর্তনীয় বিষয়। তা না হলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে, যেমন উচ্চ হারে কর, এস্টেট শুল্ক ও জোরপূর্বক সম্পত্তি হস্তান্তর। সে জন্য বিদেশে বিনিয়োগ-অভিবাসনের ক্ষেত্রে আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এ ছাড়া ভারতের আইনজীবীদের পরামর্শ হলো, কোথায় যাওয়া হবে, তা ঠিক করার পর দ্রুত চলে যাওয়া উচিত, কারণ, বিনিয়োগ-অভিবাসনের আইনকানুন খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়। এ–সংক্রান্ত শর্ত, বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় অর্থ থেকে শুরু করে সবকিছু খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়।