অর্থাভাবে পশু কোরবানি দিতে পারেননি সুদানের অনেক মুসলমান
অনেকটা নিরানন্দেই ঈদ উৎসব উদ্যাপন করেছে আফ্রিকার দেশ সুদান। চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটিতে ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অর্ধকোটির বেশি মানুষ; পাশাপাশি দেশটির অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছে। ফলে গত বছরের মতো এবারও উদ্যাপনের স্বাভাবিক আনন্দ ছাড়াই ঈদ পালন করছেন সুদানিরা। খবর সিনহুয়ার।
সুদানে এই যুদ্ধের শুরু ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল; দুই বাহিনীর ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্ব থেকে। একদিকে সেনাবাহিনী (এসএএফ), অন্যদিকে আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। একসময় মিত্র ছিল দুই বাহিনী। ২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুদানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তারা। কিন্তু আরএসএফকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়, যার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সুদান।
ইসলামি ঐতিহ্য অনুসারে, সুদানের মুসলিম পরিবারগুলো পবিত্র ঈদুল আজহার দিন সকালে কোরবানির জন্য পশু, সাধারণত একটি ছাগল বা ভেড়া ক্রয় করে তার মাংস উপহার হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে। তবে যুদ্ধের মধ্যে সুদানের স্থানীয় মুদ্রার অনেক অবমূল্যায়ন হয়েছে। এতে দেশটিতে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সঙ্গে পশুর দামও অনেক বেড়েছে। ফলে সুদানি নাগরিকেরা কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় ভেড়া পর্যন্ত কিনতে পারছেন না।
সুদানের রাজধানী খার্তুমের কাছে একটি স্থানীয় বাজারে ভেড়ার দাম চাওয়া হচ্ছে পাঁচ থেকে আট লাখ সুদানিজ পাউন্ড। সমান্তরাল বিনিময় হার হিসাব করলে এটি ২৬০ থেকে ৪২০ মার্কিন ডলারের (৩০-৫০ হাজার টাকা) সমান হয়।
দেশটির একজন পশু ব্যবসায়ী হলেন জিব্রিল মোহাম্মদ বশির। তিনি দেশটির পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চল থেকে রাজধানীতে গবাদিপশু আনেন। সম্প্রতি পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়েছে; সে কারণে পশুর মূল্যও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
সবার জন্য কোরবানি দেওয়া নিশ্চিত করতে দেশটিতে আগে সাশ্রয়ী মূল্যে পশু বিক্রির ব্যবস্থা ছিল। সে জন্য সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু উদ্যোগ ছিল; কিন্তু যুদ্ধ সব পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে।
ঈদের ঠিক আগে সুদানের উত্তরাঞ্চলের আল-দাব্বাহ শহরের এক গবাদিপশুর বাজারে প্রতিটি ভেড়া চার থেকে ছয় লাখ সুদানিজ পাউন্ডে বিক্রি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা হামিদ আবদুল্লাহ সিনহুয়াকে বলেন, এই দাম ‘অযৌক্তিক’। গত বছর ভেড়ার গড় দাম ছিল মাত্র এক লাখ পাউন্ড।
দেশটির অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ মুস্তফা বলেন, সুদানে মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং পরিবহন ও উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সে কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে।
সুদানে বেশির ভাগ গবাদিপশু আসে দেশটির কর্ডোফান ও দারফুর অঞ্চল থেকে। চলমান যুদ্ধের কারণে এসব এলাকা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোস্তফা বলেন, খারাপ রাস্তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে পশু ব্যবসায়ীরা ধীরে চলো নীতিতে চলছেন। তাঁরা কম কম পশু আনছেন; বিপরীতে বেশি দাম রাখছেন।
গৃহযুদ্ধের কারণে সুদানের বাস্তুচ্যুত একজন নাগরিক হলেন সোলেমান হামিদ। বর্তমানে তিনি পোর্ট সুদানে বসবাস করছেন। সোলেমান হামিদ বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে আমরা চাকরি হারিয়েছি। বর্তমানে জীবন ধারণের জন্য বিদেশে আমাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভর করছি।’
জাতিসংঘের হিসাবে, সুদানের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বা প্রায় আড়াই কোটি মানুষের মানবিক সহায়তা ও সুরক্ষা প্রয়োজন। দেশটিতে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বর্তমানে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মুখে আছে।