ভারতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরামর্শ দিলেন কৌশিক বসু

কৌশিক বসু, সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক

ভারতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। তাঁর মত, কর্মসংস্থানে বৃদ্ধিতে দেশটির ক্ষুদ্র ব্যবসা আরও চাঙা করা দরকার; সে জন্য এই খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে হবে। এমনকি সে লক্ষ্যে ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

ভারতের নতুন সরকার ২৩ জুলাই নতুন বাজেট ঘোষণা করবে। সেই বাজেটের আগে মোদি সরকারের উদ্দেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদের বার্তা, আসন্ন বাজেটে দেশের সাধারণ নাগরিকদের কল্যাণেই বেশি জোর দিক সরকার। শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান নয়, সরকার মানুষের কল্যাণেও নজর দেবে, এটাই তাঁর প্রত্যাশা।

খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া মূল্যস্ফীতিতে ভারতের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা সংকটে আছেন; এই বাস্তবতায় তাঁদের স্বস্তি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কৌশিক বসু বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিতে গিয়ে দুটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভারত। প্রথমত, ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্য। দ্বিতীয়ত, বেকারত্ব, বিশেষ করে তরুণদের বেকারত্ব; ভারতীয় তরুণদের বেকারত্ব বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।

সেই সঙ্গে জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় ভারতের গরিব পরিবারগুলো মূল্যস্ফীতির বড় ধরনের চাপের মধ্যে আছে। কৌশিক বসু বলেন, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ হলেও বিত্তশালী পরিবারের তুলনায় দরিদ্র পরিবারে মূল্যস্ফীতির চাপ অনেক বেশি বলে দাবি করেন কৌশিক।

অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু
ছবি: রয়টার্স

২০২২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে মোট বেকারের ৮৩ শতাংশই তরুণ। এই বাস্তবতায় তরুণদের বেকারত্ব প্রসঙ্গে কৌশিক বসু বলেন, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে তরুণদের বেকার করে রাখতে চায়। এতে দুটি কাজ হয়—প্রথমত, তরুণদের দিয়ে সস্তায় কাজ করানো যায়; দ্বিতীয়ত, বেকার তরুণদের সহজেই দলের স্বেচ্ছাসেবক বানানো যায়। একই সঙ্গে তাঁর আশা, আগামী দিনে দেশের স্বার্থে রাজনীতিকেরা হয়তো নিজ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারবেন।

এ বাস্তবতায় কৌশিক বসুর আশা, এই মাসের বাজেট থেকে সরকার শুধু জিডিপি সূচকের ঊর্ধ্বগমনের কথা না ভেবে সাধারণ নাগরিকের কল্যাণেও গুরুত্ব দেবে। তাঁর বিশ্বাস, ধনীরা বেশি কর দিতে পারবেন এবং সেই অর্থ খাতে উৎপাদন ব্যবহার করা হলে কর্মীর চাহিদা বাড়বে; ছোট ব্যবসার সাহায্য হবে এবং সাধারণ মানুষের আয় বাড়বে।

কৌশিক বসু ভারতের তরুণদের বেকারত্ব নিয়ে সব সময়ই সোচ্চার। ভারতের সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত মে মাসে ভারতের তরুণদের বেকারত্বের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে কৌশিক বসু লেখেন, ভারতের তরুণদের এই বেকারত্ব বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে; এটা অর্থনীতির জন্য গভীরভাবে ক্ষতিকর। তরুণদের বেকারত্ব ভারতের সবচেয়ে বেশি।