সাড়ে ৬২ কোটি একর এলাকায় তেলের কূপ খনন নিষিদ্ধ করলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন
সাগর-মহাসাগরের বিশাল এলাকায় তেল উত্তোলনের লক্ষ্যে কূপ খনন নিষিদ্ধ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। ট্রাম্প ইতিমধ্যে অঙ্গীকার করেছেন যে জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়াতে তিনি পদক্ষেপ নেবেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, পুরো আটলান্টিক উপকূল ও মেক্সিকো উপসাগরের পূর্বাংশের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে। এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া, অরেগন ও ওয়াশিংটন রাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল এলাকা এবং আলাস্কার পার্শ্ববর্তী বেয়ারিং সাগরেও তেল উৎপাদনের জন্য কূপ খনন করা যাবে না।
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার ফলে ৬২ কোটি ৫০ লাখ একরের (২৫ কোটি ৩০ লাখ হেক্টর) বেশি এলাকার জলাধার সুরক্ষা পাবে।
বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ‘যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পুরো দেশের জনগোষ্ঠী হুমকিতে রয়েছে এবং আমরা একটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি অর্থনীতিতে পা রাখতে যাচ্ছি, তাই আমাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য এসব উপকূল সুরক্ষিত রাখার এটাই সময়।’
বাইডেনের ঘোষণা করা নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই। ফলে আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে এটি বাতিল করা ট্রাম্পের জন্য জটিল হতে পারে। ১৯৫৩ সালের আউটার কন্টিনেন্টাল শেলফ ল্যান্ডস অ্যাক্টের আওতায় প্রেসিডেন্ট এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এই আইন সাগরে সম্পদ আহরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে ক্ষমতা দিয়েছে।
কিন্তু কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই কূপ খননের সিদ্ধান্ত বাতিলের ক্ষমতা এই আইনের বলে প্রেসিডেন্টের আছে কি না, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তেলের দাম কমানোর লক্ষ্যে জ্বালানি তেলের স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে রেকর্ড পরিমাণ জ্বালানি তেল উত্তোলন করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন গণমাধ্যমে জানানো হয়েছিল যে বাইডেন এমন একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছেন। এর পরপরই ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লিভিট একে ‘একটি অসম্মানজনক’ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যেসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূপ খনন ও তেলের দাম কমানোর নীতির পক্ষে রায় দিয়েছেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়ার জন্য এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ।
তবে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন বাইডেনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
ওসেনার জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানিবিষয়ক পরিচালক জোসেফ গর্ডন বলেন, ‘এটা সমুদ্রের জন্য দারুণ একটি বিজয়। আমাদের উপকূলীয় মানুষজনের আগামী প্রজন্ম সুরক্ষিত থাকবে।’
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সর্বশেষ এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমি, জলাধার ও মহাসাগরে ৬৭ কোটি একরের বেশি এলাকা সংরক্ষণের আওতায় এনেছেন। ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্ট এতটা করতে পারেননি।