গাজা যুদ্ধের মধ্যে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা, বেড়েছে তেলের দাম

জ্বালানি তেল

মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা আবারও বেড়ে যাওয়ায় আজ সোমবার সকালে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে।

গাজায় ইসরায়েল সর্বাত্মক হামলা শুরু করার পর তেল সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর তেল সরবরাহ কমানোর ঘোষণা, তেলের বৈশ্বিক চাহিদা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও লোহিত সাগরে জাহাজে হামলার কারণে এই খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে।

আজ সকালে ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্সের দাম ২৮ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৯ দশমিক ১৬ ডলারে উঠেছে; সেই সঙ্গে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৯ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৭৪ দশমিক ৩৬ ডলার হয়েছে।

বাজার–বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন করে বেড়ে যাওয়ার কারণে আজ সপ্তাহের প্রথম দিনে তেলের দাম বেড়েছে। ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এখন টান টান, যা অবশ্য তেলের বাজারের জন্য সহায়ক হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলার পাশাপাশি লোহিত সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা হয়েছে। গতকাল রোববার মার্কিন সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলের দুটি জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করেছে।

বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি মার্কেটের বিশ্লেষক টিনা টেং বলেছেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নতুন করে শুরু হওয়ায় তেলের বাজারে প্রভাব পড়েছে। যদিও তিনি মনে করেন, চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না পৌঁছায় তেলের দাম হয়তো খুব বেশি বাড়বে না।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের তেল উৎপাদন আরও বেড়েছে। দেশটিতে উৎপাদনশীল তেলখনির সংখ্যা এ সপ্তাহে ৫০৫-তে উন্নীত হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসের পর সর্বোচ্চ।

গত ৩০ নভেম্বর ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো নতুন করে তেল উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দেয়। কিন্তু কোন দেশ উৎপাদন কতটা কমাবে, তা নিয়ে দ্বিমতের জেরে এই বৈঠক ২৪ নভেম্বর থেকে পিছিয়ে দেওয়া হয়। তার জেরে এবং বৈশ্বিক উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি রয়েছে, তার প্রভাবেও তেলের দাম গত সপ্তাহে কমেছে।

আরবিসি ক্যাপিটালের বিশ্লেষক মাইক ট্র্যান এক নোটে বলেছেন, তেল উৎপাদন কমানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত তেলের দাম বাজারে ওঠানামা করবে। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে আরও দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে, ফলে এই সময়ে একধরনের অনিশ্চয়তা থাকবে।

এদিকে রাশিয়ার তেল যেন বেঁধে দেওয়া ৬০ ডলারের বেশি দামে বিক্রি না হয়, সে বিষয়ে তৎপর হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। লাইবেরিয়া, মার্শাল আইল্যান্ড ও পানামাকে চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য। এই দেশগুলোর পতাকাবাহী জাহাজ যেন রাশিয়ার তেল পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রির জন্য পরিবহন না করে, তা নিশ্চিত করতে চাপ দিচ্ছে এই ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দুই দেশ। সে জন্যই এই চিঠি।

এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ২০২২ সালের শেষ দিকে, যদিও অতি সম্প্রতি পশ্চিমারা তা বাস্তবায়নে কঠোর হতে শুরু করেছে। মূলত তেল বিক্রি করে রাশিয়া যেন খুব বেশি অর্থ আয় করতে না পারে এবং একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ বজায় তাকে, তা নিশ্চিত করতেই পশ্চিমারা তেলের দাম বেঁধে দেয়।

গত শুক্রবার হোয়াইট হাউস বলেছে, ওপেকের সদস্যদেশ ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর থেকে যে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছিল, সেটা আবার স্থগিত করা হতে পারে, যদি দেশটি রাজনৈতিক বন্দী এবং অনৈতিকভাবে যে মার্কিন নাগরিকদের গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দেওয়া না হয়।