কেন ইন্টার মায়ামিতে গেলেন মেসি
লিওনেল মেসি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামি ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন—এ খবরে ইতিমধ্যে শোরগোল পড়ে গেছে। ২৪ জুন ইন্টার মায়ামির সঙ্গে সাবুরা পার্কের খেলা। সেই ম্যাচে মেসি খেলতেও পারবেন না, কারণ পিএসজির সঙ্গে তাঁর চুক্তির মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত; তা সত্ত্বেও সেই ম্যাচের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
একদিকে মেসিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে অনেক শোরগোল, অন্যদিকে তিনি কেন সৌদি আরবের ক্লাবের ৫০ কোটি ডলারের প্রস্তাব গ্রহণ না করে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিলেন, চলছে তার কারণ অনুসন্ধান। ফোর্বসের সংবাদে বলা হয়েছে, ফ্লোরিডার ইন্টার মায়ামি ক্লাব বেছে নেওয়ার পেছনে সম্ভবত মেসির আয়কর–সংক্রান্ত ঝামেলার প্রভাব আছে। টাইগার উডস, ডেরেক জেটার ও টম ব্রাডির মতো অন্যান্য খেলার বিপুল আয় করা বড় তারকারাও সে কারণে ফ্লোরিডা বেছে নেন।
বিষয়টা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে ব্যক্তিগত আয়করের বিধান নেই। তার মানে এই নয় যে সেখানে থাকলে আয়কর দিতে হয় না। তবে ফ্লোরিডাভিত্তিক কোনো দলে খেললে আয়কর অনেক কম।
বিষয়টি ক্রীড়াবিদদের জন্য কুটিল ও বড় হতে পারে। কিছু কিছু অঙ্গরাজ্যে কেউ স্বল্প সময়ের জন্য থাকলে বা কাজ করলে করছাড়ের সুযোগ পান, তবে সেই আইন সাধারণত ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ, তাঁরা যেখানেই যান, সেখানেই তাঁদের খেলতে হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে খেললে অনাবাসী বিদেশি খেলোয়াড়দের ওপর কেন্দ্রীয় করের পাশাপাশি রাজ্যস্তরের আয়করও প্রযোজ্য হতে পারে।
এটা হচ্ছে জক ট্যাক্স, এর অর্থ হলো ক্রীড়াবিদেরা যেখানেই খেলুন না কেন বা যেখানেই থাকুন বা খেলুন, সেখানেই তাঁকে কর দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে খেলোয়াড়েরা কোন রাজ্যে কতক্ষণ খেলেছেন, তার ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে করারোপ করা হয়।
কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার, সেটা হলো, মেসি ফ্লোরিডায় যেদিন খেলুন বা প্রশিক্ষণ নিন বা নিছক বসবাস করুন না কেন, তাঁকে অঙ্গরাজ্যের আয়কর নিয়ে ভাবতে হবে না। কারণ, নেভাদা, টেনিসি, টেক্সাস, ওয়াশিংটন ও ফ্লোরিডা—এই পাঁচ অঙ্গরাজ্যে জক ট্যাক্স আরোপ করা হয় না। এসব অঙ্গরাজ্যে রাজ্য পর্যায়ের আয়কর নেই বলে জক ট্যাক্সও নেই।
একই সঙ্গে ফ্লোরিডায় সম্পদ স্থানান্তর করাও সহজ—সানশাইন স্টেট নামে খ্যাত এই অঙ্গরাজ্যে সম্পদ, উত্তরাধিকার ও উপহারের কর নেই। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরাও খুব স্বল্প পরিমাণে করপোরেট কর দিয়ে ব্যবসা করতে পারেন—মাত্র ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
ফ্লোরিডায় মেসির আরেকটি সুবিধা হলো, সেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ স্থানান্তর করা সহজ। ফলে মেসি সেখানে চাইলে রয়্যালটি ও ইমেজ রাইট ব্যবস্থাপনার জন্য সংস্থা খুলতে পারেন, খেলোয়াড়েরা সাধারণত যা ব্যবহার করে সম্পদ উপার্জন করে থাকেন।
২০২২ সালে মেসি ১৩ কোটি ডলার আয় করেছেন। সে ক্ষেত্রে ক্রিশ্চিয়ানা রোনাল্ডোর পরই তাঁর স্থান। তবে মেসির সব আয় মাঠ থেকে আসে না, তাঁর প্রায় অর্ধেক আয় আসে অ্যাডিডাস, বুদওয়েইজার ও পেপসিকোর মতো কোম্পানি থেকে, যারা তাঁর ভাবমূর্তি ব্যবহার করে পণ্যের প্রচার-প্রচারণা চালায়।
স্পেনের কর বিভাগের সঙ্গে মেসির বিবাদ দীর্ঘদিনের। কর বিভাগের অভিযোগ, ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিশাল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছেন মেসি। তাঁর বিরুদ্ধে ৪১ লাখ ইউরো কর ফাঁকির অভিযোগ।
এর দায় বর্তায় মেসির এজেন্টের ভূমিকা পালন করা তাঁর বাবা হোর্হে মেসির ওপরও। উরুগুয়ে, বেলিজ, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের কিছু নামকাওয়াস্তে প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বার্সেলোনার ফুটবল তারকার ছবিস্বত্ব বিক্রির মাধ্যমে এ কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এ অভিযোগে আদালতে হাজিরাও দিতে হয়েছে মেসি ও তাঁর বাবাকে।
যদিও মেসি বারবার বলে আসছেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই তিনি ৫০ লাখ ইউরো পরিশোধ করেছেন। এই অর্থ পরিশোধের পরও স্পেনের কর কর্তৃপক্ষ কর জালিয়াতির অভিযোগে তাঁর বিচার শুরু করে।
বিষয়টি হচ্ছে, এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতেই মেসি সম্ভবত সানশাইন স্টেট ফ্লোরিডাকে বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি স্পেন ও আর্জেন্টিনার দ্বৈত নাগরিক, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট নেই তাঁর। ফ্লোরিডায় খেলতে হলে তাঁর ভিসা লাগবে। সেটা আবার আরেক জটিল বিষয় হতে পারে বলে ফোর্বসের সংবাদে বলা হয়েছে।