‘একটু গরিব’ হয়েছেন শীর্ষ ধনীরা
এবারের তালিকায় আছেন ২,৬৪০ জন অতিধনী। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৩৫ জন যুক্তরাষ্ট্রের। এরপরে চীনের ৫৬২ জন ও ভারতের ১৬৯ জন রয়েছেন।
বিশ্বে গত এক বছরে ‘বিলিয়নিয়ার’ বা ‘শতকোটিপতি’খ্যাত অতিধনীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই কিছুটা গরিব হয়েছেন। অর্থাৎ তাঁদের ধনসম্পদের নিট মূল্য কমবেশি কমেছে। তবু বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতির তালিকায় তাঁরাই ঠাঁই পেয়েছেন। আর এসব অতিধনীর রাজাধিরাজ হলেন ফ্রান্সের প্রসিদ্ধ বিলাসী পণ্যের ব্র্যান্ড এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বার্নার্ড আর্নল্ট। তাঁর সম্পদের নিট মূল্য ২১১ বিলিয়ন বা ২১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। তিনিই হলেন প্রথম ফরাসি নাগরিক, যিনি বৈশ্বিক শতকোটিপতির তালিকায় প্রথম স্থানে অধিষ্ঠিত হলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের তৈরি এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলার সিইও ইলন মাস্ক। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি ডলার। আগের বছরে তিনি ছিলেন শীর্ষ স্থানে। সম্পদের মূল্য কমে যাওয়ায় প্রথম স্থান হারান ইলন মাস্ক। ১১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের নিট সম্পদ নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বৈশ্বিক ই–কমার্স অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জেফ বেজোস। কয়েক বছর আগে তিনি ছিলেন শীর্ষ স্থানে। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছেন যথাক্রমে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ও সিটিও ল্যারি অ্যালিসন এবং বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেট, যিনি বিশ্বব্যাপী ‘বিনিয়োগ গুরু’ হিসেবে পরিচিত। ল্যারি অ্যালিসন ও ওয়ারেন বাফেটের সম্পদমূল্য হচ্ছে যথাক্রমে ১০ হাজার ৭০০ কোটি ও ১০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
ফোর্বস–এর নতুন তালিকায় স্থান পেয়েছে সারা বিশ্বের ২ হাজার ৬৪০ অতিধনীর নাম, যাঁদের সম্মিলিত সম্পদের নিট মূল্য ১২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন বা ১২ লাখ ২০ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের, মানে ২০২২ সালের মার্চে প্রকাশিত তালিকায় ছিল ২ হাজার ৬৬৮ জন অতিধনীর নাম। তাঁদের সবার সম্পদের নিট মূল্য ছিল ১২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন বা ১২ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার। এতে দেখা যায়, গত এক বছরে বৈশ্বিক অতিধনীদের সম্পদ কমেছে ৫০০ বিলিয়ন বা ৫০ হাজার কোটি ডলার। কোম্পানির শেয়ারদরের পতন, ক্রমাগত সুদের হার বৃদ্ধির কারণে অতিধনী তথা শতকোটিপতিদের আয় কমেছে।
এবারও তালিকায় দেশভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি শতকোটিপতি স্থান পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটিতে এখন বিলিয়নিয়ার রয়েছেন ৭৩৫ জন, যাঁদের সম্মিলত সম্পদের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৬২ জন অতিধনী স্থান পেয়েছেন চীন থেকে (হংকং, ম্যাকাওসহ)। তাঁদের মোট সম্পদের পরিমাণ দুই ট্রিলিয়ন বা দুই লাখ কোটি ডলার।
ফোর্বস ম্যাগাজিন ৩৭ বছর ধরে ওয়ার্ল্ড বিলিয়নিয়ার্স লিস্ট বা বৈশ্বিক শতকোটিপতি তালিকা প্রকাশ করে আসছে। এতে কেবল তাঁদেরই নাম থাকে, যাঁদের নিট সম্পদের মূল্য ১০ অঙ্কে নিরূপণযোগ্য, অর্থাৎ কমপক্ষে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার কিংবা এর চেয়ে বেশি। যাঁরা ১০০ কোটি ডলার বা এর চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক তাঁদের বলা হয় বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি।
নারীদের মধ্যে সবার আগে রয়েছেন ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত প্রসাধনী কোম্পানি লোরিয়েলের মালিক ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্ট মেয়ারস ও তাঁর পরিবার। তাঁদের সম্পদের নিট মূল্য ৮ হাজার ৫০ কোটি ডলার।
ভারতে ১৬৯ শতকোটিপতি
ফোর্বস ম্যাগাজিনের এবারের তালিকায় দেশ হিসেবে তৃতীয় অবস্থান ভারতের। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশের ১৬৯ জন শতকোটিপতির তালিকায় রয়েছেন, যাঁদের সম্পদের সমন্বিত পরিমাণ ৬৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। গত বছরের তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন ১৬৬ জন। তাঁদের মোট সম্পদমূল্য ছিল ৭৫ হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ভারতীয় শতকোটিপতিদের সামগ্রিক সম্পদমূল্য ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বা ১০ শতাংশ কমেছে।
যা–ই হোক, এবারে ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি ৮ হাজার ৩৪০ কোটি ডলারের নিট সম্পদমূল্য নিয়ে ফোর্বস–এর তালিকায় নবম হয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি এখন এশিয়া ও ভারতের শীর্ষ ধনী। অতীতেও তিনি ভারত ও এশিয়ার শীর্ষ ধনী এবং ফোর্বস–এর তালিকায় শীর্ষ দশে ছিলেন। সূত্র: ফোর্বস