অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে

জ্বালানি তেলের দাম আবার বেড়েছে
রয়টার্স

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবারও বেড়েছে। যেসব কারণে আজ সোমবার সকালে এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বেড়েছে, সেগুলো হলো চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান এবং তেলের বড় বড় উৎপাদকেরা সরবরাহ কমাবে, এমন আশঙ্কা।

সকালে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৭ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮ দশমিক ৭২ ডলারে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়েছে ২৫ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ—প্রতি ব্যারেলে এই তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৮০ ডলার। খবর রয়টার্সের

টানা দুই সপ্তাহ দাম কমার পর গত সপ্তাহে এই দুই ধরনের তেলের দাম ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ১ সেপ্টেম্বর বা শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৮ দশমিক ৯৯ ডলারে ওঠে। পরে তা কিছুটা কমার পর আজ আবার বাড়ল।

আগস্ট মাসে চীনের শিল্পোৎপাদন অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। দেশটির উৎপাদনসূচক চাঙা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হওয়ায় তেলের বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। অর্থাৎ, চীনের তেলের চাহিদা বাড়বে, এই ধারণা থেকে দাম বাড়ছে।

চীন এক মাস ধরে অর্থনীতি চাঙা করতে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেমন গত সপ্তাহেই দেশটির বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার কমানোর সঙ্গে সঙ্গে গৃহঋণের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। সে কারণেও তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে।

এ ছাড়া চীনের দুর্দশাগ্রস্ত আবাসন খাত নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের আশা তৈরি হয়েছে যে চীন সরকার এই খাত চাঙা করতে আরও কিছু ব্যবস্থা নেবে। আবাসন খাত চীনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশই আসে এই খাত থেকে।

এদিকে গত শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, গত আগস্ট মাসে সে দেশে অকৃষি খাতের কর্মসংস্থান আগের মাসের চেয়ে ১ লাখ ৮৭ হাজার বেড়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় অর্থাৎ কর্মসংস্থানের গতি কমে যাওয়ার কারণে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এদিকে তেলের সরবরাহ আরও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, ওপেকের সদস্যদের সঙ্গে চলমান তেল সরবরাহ হ্রাসের মানদণ্ডের বিষয়ে তাঁর দেশের ঐকমত্য হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই পরিকল্পিত এই হ্রাসের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

রাশিয়া বলেছে, সেপ্টেম্বর মাসে তারা তেলের উৎপাদন দৈনিক তিন লাখ ব্যারেল হ্রাস করবে। গত আগস্ট মাসে তারা যে পাঁচ লাখ ব্যারেল হ্রাস করেছিল, তার অতিরিক্ত আরও তিন লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাবে রাশিয়া। এ ছাড়া সৌদি আরব যে নিজে থেকে ১০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের কথা বলেছিল, তারা তা অক্টোবর মাস পর্যন্ত অব্যাহত রাখবে।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, ২০২২ সালে তা ১৩৩ ডলারে ওঠে। কিন্তু এরপর যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ায় তেলের দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। একসময় তা যুদ্ধের আগের পর্যায়ে নেমে আসে।

তবে সৌদি আরব তেলের দাম আবারও বাড়াতে উৎপাদন কমাতে শুরু করে। তারা চায়, তেলের দাম প্রতি ব্যারেল অন্তত ৮০ ডলার হোক। তাদের উৎপাদন হ্রাসের কারণে তেলের দাম অবশ্য এখন ৯০ ডলারের কাছাকাছি উঠে গেছে।