চলতি বছর বৈশ্বিক সরকারি ঋণ ১০০ ট্রিলিয়ন ছাড়াবে: আইএমএফ
চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট সরকারি ঋণ এই প্রথম ১০০ ট্রিলিয়ন (১ ট্রিলিয়ন ১ লাখ কোটির সমান) ডলার ছাড়িয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, বৈশ্বিক সরকারি ঋণের পরিমাণ এর পর থেকে প্রত্যাশার চেয়ে আরও দ্রুতগতিতে বাড়বে। মূলত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির চাপে ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়বে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সূত্রে এই খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। আইএমএফ আরও বলেছে, চলতি ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি ঋণের পরিমাণ মোট বৈশ্বিক জিডিপির ৯৩ শতাংশে উন্নীত হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে তা ১০০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় এই ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৯৯ শতাংশে উন্নীতে হয়েছিল। এত দিন এটাই ছিল বৈশ্বিক রেকর্ড। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে একলাফে তা ১০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ে। মহামারির সময় অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে গিয়েছিল। ফলে ব্যয় নির্বাহে বিভিন্ন দেশের সরকারকে বিপুল হারে ঋণ করতে হয়েছিল।
আগামী সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে আইএমএফ ফিসক্যাল মনিটর শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, মার্কিন সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা আছে, তাতে ভবিষ্যতে বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, দেশে দেশে রাজস্ব খাতের অনিশ্চয়তা বাড়ছে; সেই সঙ্গে কর সংগ্রহ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতানৈক্য বাড়ছে। করনীতিতে পরিবর্তন আনা কঠিন হচ্ছে। কিন্তু একই সময়ে বিভিন্ন কারণে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যেমন পরিবেশ রক্ষায় ব্যয় বৃদ্ধি, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ভরণপোষণ, নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জসহ অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয়।
তিন সপ্তাহ পরই মার্কিন নির্বাচন। এই সময় দেশটির ঋণ নিয়ে আইএমএফের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস উভয় প্রার্থী নতুন করে কর ছাড়সহ ব্যয় বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছেন। ট্রাম্প করপোরেট কর আবারও কমানোর অঙ্গীকার করেছেন। এমনিতেই মার্কিন সরকারের ঋণ জাতীয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে। নতুন করে কর ছাড় দেওয়া ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হলে দেশটির জাতীয় ঋণ আরও অনেকটাই বেড়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কমিটি ফর আ রেসপনসিবল ফেডারেল বাজেটের হিসাবে, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে এবং অঙ্গীকার অনুযায়ী কর ছাড় দিলে আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ বাড়বে ৭ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ৭ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। যেখানে কমলা হ্যারিসের অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হলে ঋণ বাড়বে তার অর্ধেকেরও কম, সাড়ে তিন লাখ কোটি ডলার।
কমিটি ফর আ রেসপনসিবল ফেডারেল বাজেট আরও বলেছে, জাতীয় ঋণের পূর্বাভাস অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব ঋণের চেয়ে কম হয়। দেখা যায়, ১০ বছরের মেয়াদে কর-জিডিপির অনুপাত পূর্বাভাসের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি হয়। তাদের সতর্ক বার্তা, প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া, ঋণের কঠিন শর্ত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে মুদ্রা ও রাজস্ব নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
পরিস্থিতির চরম অবনতি হলে এমন হতে পারে যে আগামী তিন বছর বৈশ্বিক সরকারি ঋণ-জিডিপির অনুপাত ১১৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে; বর্তমান হিসাবের চেয়ে যা ২০ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
সরকারি ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি ঋণও বাড়ছে। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের (আইআইএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ ২০২৩ সালে রেকর্ড ৩১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে উঠেছে। অর্থাৎ বৈশ্বিক ঋণ এর আগে কখনো এই উচ্চতায় ওঠেনি।
আইআইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বৈশ্বিক ঋণের ভান্ডারে আরও ১৫ ট্রিলিয়ন বা ১৫ লাখ কোটি ডলারের বেশি যোগ হয়েছে। মোট ঋণের প্রায় ৫৫ শতাংশ তৈরি হয়েছে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোয়; এর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানি। চীন, ভারত ও ব্রাজিলের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ঋণ বৃদ্ধির ধারা দেখা গেছে।