রাশিয়া–ইউক্রেন উত্তেজনায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম ১০০ ডলার ছুঁইছুঁই
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার উত্তেজনা এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকির সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। যেকোনো সময়ই ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া সামরিক হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কাই যেন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এ রকম এক চরম অনিশ্চয়তাপূর্ণ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারেও সূচকের পতন ঘটছে।
এদিকে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্রের মহড়াও শুরু করে দিয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। বলা হয়েছে, রুশ পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিদেশে সৈন্য ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পরই তিনি বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোকে পাশে নিয়ে কম্পিউটারে যৌথ পরমাণু মহড়া দেখেছেন। কম্পিউটারের পর্দায় তাঁরা জাহাজ, বিমান ও ডুবোজাহাজ থেকে নির্ভুল দক্ষতায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পরমাণু অস্ত্রের আঘাত হানার দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করেন। এতে প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের লক্ষ্য কি ইউক্রেন?
আজ বুধবার প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের (৪২ মার্কিন গ্যালন বা ১৫৯ ব্রিটিশ লিটার) দাম বেড়ে ৯৯ ডলারে উঠেছে। এই দাম যেকোনো সময়ই ১০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে আগাম কেনাবেচায় আজ বুধবার প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের (৪২ মার্কিন গ্যালন বা ১৫৯ ব্রিটিশ লিটার) দাম বেড়ে ৯৯ ডলারে উঠেছে। এই দাম যেকোনো সময়ই ১০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারিমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেল আজ ৯৬ ডলার ব্যারেল দরে বিক্রি হয়েছে।
ফিডেলিটি ইন্টারন্যাশনালের বিনিয়োগ পরিচালক মাইক কুরি বলেন, ইউক্রেন সংকট, যুক্তরাষ্ট্রে বৈরী আবহাওয়া, বিনিয়োগের অভাবে জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
আগের দিন মঙ্গলবার ব্রেন্ট ক্রুড তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ৯৮ দশমিক ২১ মার্কিন ডলারে উঠেছিল, যা বিগত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই দিনে ডব্লিউটিআই ক্রুড অয়েল ৯৬ দশমিক ৮২ ডলারে উন্নীত হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরু করার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে রয়েছে। গোলাবর্ষণের মতো ঘটনা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্টসহ পশ্চিমা দেশগুলোর তিক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে দ্বিতীয় দিনের মতো আজও সূচকের পতন ঘটেছে। এর মধ্যে জাপানের জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের নিক্কেই ২২৫ সূচক ১ দশমিক ৭ শতাংশ ও চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বিত সূচক ১ শতাংশ কমেছে।
এই লেখা তৈরি করার সময় পর্যন্ত ইউরোপ-আমেরিকার শেয়ারবাজারে আজকের লেনদেন শুরু হয়নি। তবে গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ২৫০ সূচক শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ কমেছে। প্যারিসের সিএসি ৪০ এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের ড্যাক্স সূচকও পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডাউজোন্স সূচক ১ দশমিক ৪ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১ শতাংশ ও নাসড্যাক ১ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে।
আগের দিন সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১ দশমিক ৬ শতাংশ, ডাও জোন্স ১ দশমিক ৪ শতাংশ ও নাসড্যাক ১০০ সূচক ২ দশমিক ২ শতাংশ কমে। আর লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক ১ দশমিক ২৪ ও এফটিএসই ২৫০ সূচক ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসের এইএক্স ১ দশমিক ২২ শতাংশ, প্যারিসের সিএসি ৪০ সূচক ১ দশমিক ৬১ শতাংশ, ফ্রাঙ্কফুর্টের ড্যাক্স ২ শতাংশ পড়ে যায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিমধ্যে রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অভিজাতদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি যুদ্ধ এড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন।
রুশ-ইউক্রেন উত্তেজনা ও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল সরবরাহে বিঘ্নিত হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পণ্যটির দাম বাড়ছে, যা গত সোমবার রুশ প্রিসেডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশ প্রদান এবং রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই শুরু হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবে সেই দেশের আর্থিক খাত অচল করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিমধ্যে রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অভিজাতদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি যুদ্ধ এড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন। পশ্চিমা দেশগুলোও রাশিয়ার ওপর স্মরণকালের সবচেয়ে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যানের পূর্বাভাস হচ্ছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১২৫ ডলারে এবং আগামী ২০২৩ সালে ১৫০ ডলারে উঠতে পারে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ তাদের পশ্চিমা মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়াও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্ববাজারে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি কমিয় দিতে পারে। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম বা ১০ শতাংশ জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক হল রাশিয়া। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ তেল রপ্তানি করে সৌদি আরব।
আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২০ শতাংশ, চলতি ফেব্রুয়ারিতে ১০ শতাংশ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যানের পূর্বাভাস হচ্ছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১২৫ ডলারে এবং আগামী ২০২৩ সালে ১৫০ ডলারে উঠতে পারে। এর আগে ২০০৮ সালে জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ১৪৭ ডলারে উঠেছিল, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। সূত্র: বিবিসি, আনন্দবাজার পত্রিকা ও অয়েলপ্রাইস ডট কম।