বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ডসংখ্যক কর্মী চাকরি ছেড়েছেন। সেই দেশের গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, চাকরি ছাড়ার দিক থেকে ২০২১ সালে একটি ঐতিহাসিক বছর কাটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে দেশটিতে ৪০ লাখের বেশি লোক তাঁদের চাকরি ছেড়েছেন। কর্মস্থল ছাড়ার এ সংখ্যা নভেম্বরে আরও ৫০ হাজার বেশি ছিল। সব মিলিয়ে ২০২১ সালে দেশটিতে মোট ৬ কোটি ৮৯ লাখ কর্মী চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যে ৪ কোটি ৭৪ লাখ কর্মী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। বাকিদের ছাঁটাই করা হয়েছে।
চাকরি ছাড়ার এ সংখ্যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি। দেশটিতে ২০২০ সালে ৩ কোটি ৬৩ লাখ লোক চাকরি ছেড়েছিলেন। আর ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ২১ লাখ।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, লক্ষ লক্ষ কর্মী ভালো বেতন, নগদ প্রণোদনা বা আরও ভালো সুবিধার জন্য চাকরি ছেড়েছেন। তবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী অন্য কারণেও চাকরি ছেড়েছেন। করোনা মহামারি চলাকালে পরিবারের শিশু কিংবা বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার জন্যও অনেকে শ্রমবাজার ছাড়েন।
এ ছাড়া অনেক বয়স্ক কর্মীও এ সময়ে তাড়াতাড়ি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছিলেন। কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি করে তরুণদের নিয়োগ দিতে চায়। সে জন্য তাঁদের শ্রমবাজার থেকে বের করে দেওয়ার আগেই তাঁরা স্বেচ্ছায় অবসরে চলে যান।
সিএনএন জানায়, গত বছর রেকর্ডসংখ্যক লোক চাকরি ছাড়লেও সার্বিকভাবে মার্কিন শ্রমবাজারে মোট কর্মসংস্থান বেড়েছে। যেমন ২০২১ সালে ৬ কোটি ৮৯ লাখ কর্মীর চাকরি ছাড়ার বিপরীতে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৭ কোটি ৫৩ লাখ লোকের। অর্থাৎ গত বছর দেশটিতে ৬০ লাখ ৪০ হাজার কর্মসংস্থান বেড়েছে। গত ডিসেম্বরেই নতুন চাকরির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯ লাখ।
তবে পরিসংখ্যান বলছে, কাজের নতুন সুযোগও মার্কিন শ্রমবাজারে কর্মী-সংকট কমাতে পারেনি। তাই কর্মী চাহিদা মেটাতে অতি স্বল্প সময়ে কাজে নিয়োগের মতো সুযোগ দিচ্ছে কোম্পানিগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের গৃহস্থালিসামগ্রীর বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হোম ডিপো জানিয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরিপ্রার্থিরা আবেদন করার এক দিনের মধ্যেই চাকরির অফার নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থিদের দক্ষতা উন্নয়ন, পণ্য ক্রয়ে বিশেষ ছাড়, নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ প্রদানের নিশ্চয়তাও দিচ্ছে তারা। হোম ডিপোর ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক শেলিং জানান, এই ‘দ্রুত’ নিয়োগপ্রক্রিয়ায় তাঁরা এ মৌসুমে এক লাখ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছেন।
বৈশ্বিক মহামারির পরিস্থিতিতে নিয়োগকর্তা ও চাকরিপ্রার্থী উভয়কেই কাজের পরিবেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কলেজ পাস করা কর্মীরা আর্থিক নিরাপত্তার চেয়ে কাজের আবেগকে বেশি গুরুত্ব দেন। তাই কোম্পানিগুলোও নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন কর্মীদের আরও কী কী সুযোগ দেওয়া যায়, তা নতুনভাবে মূল্যায়ন করছে।