ছয় বছরে ৬৩০ কোটি ডলারে পৌঁছে যাওয়া এক স্টার্টআপের গল্প
মাত্র ছয় বছরের মধ্যে ইউরোপের সফটওয়্যার ফার্ম পারসোনিও ইউরোপের অন্যতম মূল্যবান স্টার্টআপ হয়ে উঠেছে। কোম্পানির ভ্যালুয়েশন বা মূল্যমান দাঁড়িয়েছে ৬৩০ কোটি ডলার।
কিন্তু কোম্পানির পথচলা শুরুতেই এত মসৃণ ছিল না। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হানো রেনার সেই দুঃসময়ের স্মৃতিচারণা করেছেন। সিএনবিসির সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে একসময় কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে মাত্র ২২৬ ডলার অবশিষ্ট ছিল। তবে ভাগ্য ভালো, সেই ঘটনার পরই কোম্পানি বড় এক বিনিয়োগ পায়। এর পর থেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে।
পারসোনিও মূলত ছোট ও মাঝারি ব্যবসা-বাণিজ্যের সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পারসোনিওর প্রতিষ্ঠাতারা এক বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এই অনুপ্রেরণা লাভ করেন। সেটা হলো, তাঁদের এক বন্ধু একটি কোম্পানির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু সেখানকার মানবসম্পদ বিভাগ থেকে তাঁরা বরাবরই এক অভিযোগ পাচ্ছিলেন, সেটা হলো প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের অভাবে কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
এই কথা শোনার পর কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা সমাধান দেওয়ার চিন্তা করেন পারসোনিওর প্রতিষ্ঠাতারা। তখন তাঁরা ছাত্র। তাঁদের ছিল না বসার কোনো জায়গা। সে জন্য তাঁরা কলেজের এক জায়গায় সফটওয়্যার তৈরির জায়গা খুঁজছিলেন। সে জন্য ছাত্রজীবনের যৎসামান্য সঞ্চয় বিনিয়োগ করেন তাঁরা।
এরপর প্রথম সফটওয়্যার পারসোনিওর প্রতিষ্ঠাতারা বিক্রিও করে ফেলেন। সেই সফটওয়্যার বিক্রির টাকা দিয়ে কোম্পানির উন্নয়নে আবার বিনিয়োগ করেন। প্রথমত, তাঁরা সফটওয়্যার তৈরির লাইসেন্স নেন। এরপর তাঁরা ছোট একটি কার্যালয় কিনে কয়েকজন কর্মীও নিয়োগ দেন।
এই সফলতার ওপর ভর করে পারসোনিওর প্রতিষ্ঠাতারা সিড ফান্ড লাভ করেন। ২০১৬ সালে তাঁরা ২১ লাখ ইউরো পান। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিল গ্লোবাল ফাউন্ডার্স ক্যাপিটাল—ফেসবুক ও লিংকডইনে যাদের বিনিয়োগ আছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী বিনিয়োগের আগে পারসোনিওকে বকেয়া সব বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।
এর পর থেকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে শুরু করে। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে তারা ২৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ লাভ করে। আর কোম্পানির মূল্যমান দাঁড়ায় ৬৩০ কোটি ডলার। ব্যাপারটা উল্লেখযোগ্য এ কারণে যে গত জানুয়ারি মাসেই কোম্পানির মূল্যায়ন দাঁড়িয়েছিল ১৭০ কোটি ডলার। ১০ মাসের মধ্যে মূল্যায়ন তিন গুণের বেশি বেড়ে যায়।
নতুন এই তহবিল সফটওয়্যার উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে, যার নাম পিপল ওয়ার্কফ্লো অটোমেশন। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানির মানবসম্পদ ও অন্যান্য বিভাগের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচানোর অবকাশের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কর্মী নিয়োগের সময় বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হলে এর প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়।
কোম্পানির সফলতার সূত্র হিসেবে হানো রেনার মনে করেন, কেবল কর্মীদের বস হয়ে সফলতা লাভ করা যায় না, বরং কর্মীরা যেন কোম্পানি স্বত্বাধিকারী হিসেবে নিজেদের বোধ করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। রেনার আরও বলেন, কর্মীরা যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে বোধ করেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এখন পারসোনিওর কর্মীর সংখ্যা সহস্রাধিক। অথচ ২০২০ সালেই কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩৫০।