পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায়

তৈরি পোশাকসহ হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, হোমটেক্সটাইল, প্লাস্টিক ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক রপ্তানি বেড়েছে।

পণ্য রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে ১ হাজার ৫৭৯ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আজ রোববার পণ্য রপ্তানির হালনাগাদ এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, তৈরি পোশাকসহ হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্রকৌশল পণ্য, হোমটেক্সটাইল ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ অক্টোবর মাসে ৪১৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় এর আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ের ৩৪২ কোটি ডলারের চেয়ে ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে প্রকৃত পণ্য রপ্তানির ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করে। ফলে পণ্য রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিলের তথ্য উঠে আসে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, ইপিবি দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করলেও সে অনুযায়ী দেশে আয় আসছিল না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, এত রপ্তানি হয়নি। তাই আয় বেশি আসার যৌক্তিকতা নেই।

এ ঘটনার পর ইপিবি কয়েক মাস রপ্তানির তথ্য প্রকাশ বন্ধ রাখে। গত মাসে সংস্থাটি অবশ্য জানায়, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত অর্থবছর প্রকৃত রপ্তানি ছিল ৪ হাজার ৮১ কোটি ডলারের, অর্থাৎ প্রকৃত রপ্তানির চেয়ে ৩৬৬ কোটি ডলার বেশি রপ্তানি দেখিয়েছে ইপিবি।

জানতে চাইলে ইপিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। এই হিসাবের মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্রচ্ছন্ন রপ্তানি যুক্ত আছে। ফলে প্রকৃত রপ্তানি এর চেয়ে কম হবে।

কোন খাতের রপ্তানি কত

দেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৮১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। গত অক্টোবরে ৩২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।

তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ সময়ে ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের পণ্য। নিট পোশাকে ১২ শতাংশ ও ওভেন পোশাকে সাড়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং শিল্পাঞ্চলে শ্রম অসন্তোষের কারণে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে অনেক ক্রয়াদেশের পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণ করতে পারেনি অনেক প্রতিষ্ঠান। আটকে থাকা ক্রয়াদেশের পণ্যও গত মাসে জাহাজীকরণ হয়েছে। তা ছাড়া শীত মৌসুম ও ক্রিসমাসের পণ্য জাহাজীকরণ শুরু হওয়ায় রপ্তানি বাড়ছে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পোশাকের বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আগামী শীতের ক্রয়াদেশ আসার হারও বাড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে কারখানার উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৩৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। আর শুধু অক্টোবরে ১১ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি অক্টোবরে ১ শতাংশ কমেছে। তবে অর্থবছরের প্রথম চার মাস মিলিয়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ সময়ে ৩৭ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৪ কোটি ডলার।

দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাতের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে ১৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ২৬ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের, যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ২৫ কোটি ডলারের হোমটেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি।