নগদ টাকার অভাবে হাজার কোটি টাকার আরেকটি বন্ড ছেড়েছে সরকার
নগদ টাকার অভাব রয়েছে, তাই বিদ্যুতের দেনা শোধে আরও ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছেড়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গতকাল সোমবার বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকের অনুকূলে এ বন্ড ছেড়েছে। সামিট গ্রুপ ও কনফিডেন্স গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ মোট ২০টি কোম্পানি ইবিএলের কাছে দেনা। অর্থ বিভাগের সঙ্গে গতকাল চুক্তি হওয়ায় ইবিএল এখন এসব কোম্পানির কাছে আর কোনো টাকা চাইবে না। কারণ, এ দায়িত্ব এখন সরকার কাঁধে নিয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
টাকার অভাবে সার ও বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে কোনো টাকা দিতে পারছিল না। দুই পণ্যে সরকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা দেনা। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে আবার বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর (আইপিপি) অংশ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাকি টাকা সারের। তবে দেনা শোধে বিশেষ বন্ড ছাড়া হবে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো।
‘সংকটে না থাকলে সরকার এ পথে যেত না। এ উদ্যোগে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ বাড়বে।’আহসান এইচ মনসুর, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক
বন্ড ছাড়ার ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এর ফলে ব্যাংকের কাছে কোম্পানিগুলোর দায়টা সমন্বয় হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা করতে তাদের আর অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না। আর ব্যাংকের সুবিধা হচ্ছে, তারা বন্ড রেখে টাকা নিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে, অন্য ব্যাংকের কাছে এগুলো বিক্রিও করতে পারবে। এ বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তাদের নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার (এসএলআর) বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে পারবে। আর সরকারের জন্য সুবিধা হলো, নগদ টাকা আপাতত পরিশোধ করতে হবে না। অর্থাৎ দায় পরিশোধে সরকারও একটু সময় পেল।
চলতি মাস থেকে সরকার বিশেষ বন্ড ছাড়া শুরু করেছে। প্রথম ছাড়া হয় সার কেনা বাবদ ৩ হাজার ১৬ কোটি টাকার বন্ড। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের অনুকূলে রয়েছে ২ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের অনুকূলে ৪৫৯ কোটি টাকা। একই কায়দায় বিদ্যুতের দেনা পরিশোধেও বিশেষ বন্ড ছাড়া হয়েছে চলতি মাসেই। এর মধ্যে সিটি ব্যাংকের অনুকূলে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি, পূবালী ব্যাংকের অনুকূলে ৭৭ কোটি ৫০ লাখ এবং ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে ২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকার বন্ড ছাড়া হয়। ইবিএলসহ বিদ্যুতের দেনা শোধে এ পর্যন্ত বন্ড ছাড়া হয়েছে মোট ৫ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার।
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৪০টি ব্যাংকের অনুকূলে যে ২৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছাড়া হবে, তার মধ্যে সার ও বিদ্যুৎ খাতে ইতিমধ্যে এক-তৃতীয়াংশের মতো ছাড়া হয়ে গেছে। অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এভাবে একটি-দুটি ব্যাংকের অনুকূলে বিশেষ বন্ড ছাড়ার পরিবর্তে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সবগুলোর অনুকূলে একবারে বন্ড ছাড়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’
ইসলামী ব্যাংক ছাড়া বন্ডের কুপন রেট বা সুদহার হচ্ছে ৮ শতাংশ। এ হার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা রেপো রেটের সমান। তবে ভবিষ্যতে রেপো রেট বাড়লে এখানেও বাড়বে, আর সেখানে কমলে এখানেও কমবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংকটে না থাকলে সরকার এ পথে যেত না। এ উদ্যোগে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ বাড়বে।’
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৪০টি ব্যাংকের অনুকূলে যে ২৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছাড়া হবে, তার মধ্যে সার ও বিদ্যুৎ খাতে ইতিমধ্যে এক-তৃতীয়াংশের মতো ছাড়া হয়ে গেছে। অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এভাবে একটি-দুটি ব্যাংকের অনুকূলে বিশেষ বন্ড ছাড়ার পরিবর্তে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সবগুলোর অনুকূলে একবারে বন্ড ছাড়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’
ইসলামী ব্যাংক ছাড়া বন্ডের কুপন রেট বা সুদহার হচ্ছে ৮ শতাংশ। এ হার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা রেপো রেটের সমান। তবে ভবিষ্যতে রেপো রেট বাড়লে এখানেও বাড়বে, আর সেখানে কমলে এখানেও কমবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংকটে না থাকলে সরকার এ পথে যেত না। এ উদ্যোগে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ বাড়বে।’