গাড়ির শুল্ক ৪ জুলাইয়ের মধ্যে বাতিল চায় চীন, না হলে পাল্টা ব্যবস্থার ইঙ্গিত
চীনের বিদ্যুৎ-চালিত গাড়িতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে প্রাথমিক শুল্ক বসিয়েছে, বেইজিং চায় আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে তা তুলে নেওয়া হোক। চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস এ খবর দিয়েছে। দুই পক্ষ নতুন দফার বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে সমঝোতায় পৌঁছানোর পর বেইজিংয়ের এই মনোভাবের কথা জানা গেল।
রয়টার্স জানিয়েছে, চীনে তৈরি বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী ৪ জুলাই থেকে সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন শুল্ক কার্যকর করবে। তবে চীনা এসব গাড়ির বিষয়ে ইইউর তদন্ত অব্যাহত থাকবে। বেইজিং বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ির নির্মাতাদের অন্যায্য ভর্তুকি দিচ্ছে, এমন অভিযোগর ব্যাপারে তদন্ত করছে ইইউ।
চীন শুল্ক বাতিল করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অনেকবার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, এ নিয়ে আলোচনা করতে তারা আগ্রহী। ট্রাম্পের মার্কিন প্রশাসন চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপের পর বেইজিং আর নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না। তবে চীন পরিষ্কার করেই বলেছে, এমন কোনো বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে চীনা কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া হবে।
শনিবার ইইউ কমিশনার ভ্যালডিস ডমব্রোভসকিস ও চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও কথা বলেন এবং শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হন। এই টেলিফোন আলোচনা এমন সময় অনুষ্ঠিত হয়, যখন জার্মানির অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী চীন সফর করছিলেন। জার্মান মন্ত্রী এর আগে জানান, আলোচনার জন্য দরজা ‘খোলা’ রয়েছে।
গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে ভাষ্যকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আলোচনায় সবচেয়ে ভালো ফল হবে আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্কসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করা। পত্রিকায় আরও বলা হয়, ইইউর সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ চীনকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করবে। আর বাণিজ্য নিয়ে বিরোধ আরও বাড়লে দুই পক্ষের জন্যই তা হবে পরাজয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের ভর্তুকি নিয়ে যে তদন্ত চালাচ্ছে, তা শেষ হওয়ার পর আগামী ২ নভেম্বর শুল্ক আরোপের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
বাণিজ্যযুদ্ধ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য নীতি আগের চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষাবাদী অবস্থান নিতে শুরু করেছে। তাদের উদ্বেগ হলো, চীন যেভাবে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাতে সস্তা চীনা পণ্যে ইউরোপের বাজার ছেয়ে যাবে। যেহেতু চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের চাহিদা কমছে, তাই তারা রপ্তানির দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
চীন অন্যায্য ভর্তুকি দিচ্ছে কিংবা তাদের অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে, এমন অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে। বরং চীনের যুক্তি হলো, তাদের বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি শিল্পের উন্নতির পেছনে রয়েছে প্রযুক্তি, বাজারজাতকরণ ও শিল্পের সরবরাহ শৃঙ্খলে অগ্রগতি।
পাল্টা ব্যবস্থা
বেইজিং যদিও আলোচনা চাইছে, তারপরও তারা ইঙ্গিত দিয়েছে যে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তা ঘটবে যদি ইউরোপীয় কমিশনের কমিশনাররা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসেন। তারা আরও মনে করে, পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য পুরোপুরি দায়ী ব্রাসেলস।
গ্লোবাল টাইমস এর আগে প্রথম রিপোর্ট করেছিল যে ইউরোপ থেকে আমদানি করা শূকরের মাংসের বিষয়ে তদন্ত শুরু করার মাধ্যমে পাল্টা পদক্ষেপের চিন্তা করছে চীন। গত সপ্তাহে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই তদন্ত শুরু করা হবে। পাশাপাশি ইউরোপের দুগ্ধজাত পণ্যে ভর্তুকি নিয়ে তদন্ত ও পেট্রলচালিত বড় গাড়িতে শুল্ক বসানোর বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছে বেইজিং।
বার্লিনভিত্তিক চীনা গবেষণাকেন্দ্র মেরিকসের প্রধান বিশ্লেষক জেকব গুন্টার বলেন, ‘২ দশমিক ৫ লিটার কিংবা তার চেয়ে বেশি ক্ষমতার ইঞ্জিনবিশিষ্ট ইউরোপীয় গাড়িতে বেইজিং ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়াবে বলে মনে হচ্ছে।’