ধসে পড়া ব্যাংকের জন্য করের অর্থ ব্যবহার করা হবে না, বলছেন জো বাইডেন
ধসে পড়া সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের আমানতকারীদের জন্য করদাতাদের অর্থ খরচ করা হবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউস থেকে টেলিভিশনে প্রচারিত এক মন্তব্যে তিনি বলেন, আমানতকারীরা যাতে অর্থ ফেরত পান, সরকার তা নিশ্চিত করছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকে (এসভিবি) ধস নামার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন আমেরিকাবাসীকে আবারও আশ্বস্ত করেছেন যে দেশটির ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিরাপদ রয়েছে এবং যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণেই আছে।
বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকানরা এ ব্যাপারে আস্থাবান থাকতে পারে যে ব্যাংকিং খাত নিরাপদ। প্রয়োজন হলে আপনি আপনার আমানত ফেরত পাবেন।’
তবে টেলিভিশনে করা ওই মন্তব্যে তিনি স্পষ্ট করেই বলেন যে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের আমানতের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য জনগণের করের টাকা ব্যবহার করা হবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো ক্ষতিই করদাতারা বহন করবেন না।’
জো বাইডেন আরও বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে ব্যাংকগুলো যে বিমার অর্থ রাখে, সেখান থেকেই গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়া হবে।’
এসভিবির ধসের পর নিয়ন্ত্রকেরা আরও একটি ব্যাংক অধিগ্রহণ করেছে। সিগনেচার ব্যাংক নামের ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি নিউইয়র্কভিত্তিক।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন কংগ্রেসকে আহ্বান জানিয়েছেন আরও কঠোর আইন করার জন্য। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর ‘কঠোর’ বিধিবিধান করা হলেও তার রিপাবলিকান পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় সেগুলো বাতিল করা হয়।
নিয়ন্ত্রকদের পদক্ষেপ
এদিকে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকে ধস নামার পর আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংকটের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার কারণে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ। এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো দেশটির ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা জোরদার করা।
তবে এসব ব্যবস্থা নেওয়ার মধ্যেই কর্তৃপক্ষ আরেকটি ব্যাংক বন্ধ করে দেয়।
নিয়ন্ত্রকেরা জানান যে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের গ্রাহকেরা সোমবার থেকে তাঁদের জমা করা অর্থ তুলতে পারবেন। এ ছাড়া একটি আপৎকালীন তহবিল গঠন করা হয়েছে, যাতে ব্যাংকগুলো জরুরি প্রয়োজনে অর্থ পেতে পারে। এ অর্থ যাতে সহজে পাওয়া যায়, ফেডারেল রিজার্ভ সেটিও নিশ্চিত করেছে।
এসব পদক্ষেপ কিছু স্বস্তি আনলেও ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে। এখন অনেকেই সন্দেহ করছেন যে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ যতটা আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়িয়ে চলছিল, সেই পরিকল্পনায় তারা স্থির থাকবে কি না।
টরন্টোভিত্তিক করপে প্রতিষ্ঠানের প্রধান বাজার কৌশলবিদ কার্ল শ্যামোটা বলেন, ‘আমরা মনে করি ফেডারেল রিজার্ভ, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা অবশ্য ব্যাংকিং খাতের মানসিক নেতিবাচক অবস্থা দূর করবে।’
তবে তিনি মনে করেন, যা ঘটেছে, তা আরও অস্থিরতা তৈরি করবে এবং বিনিয়োগকারীরা লক্ষ করছেন যে ফেডারেল রিজার্ভের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্যেই আরও কোনো সমস্যা দেখা দেয় কি না।
সম্প্রতি নিউইয়র্কভিত্তিক সিগনেচার ব্যাংক আর্থিক চাপের মধ্যে পড়ার কারণে দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সেটি বন্ধ করে দিয়েছে।
কিন্তু এরপরও উদ্বেগ থাকার কারণে সোমবার এশিয়ার বাজারে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, জাপানের মিতসুবিশি এবং সিঙ্গাপুরের ডিবিএস।
মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে। তবে এটা যে আর্থিক ব্যবস্থা ও বিশ্বজুড়ে বাজারের ওপর কতটা চাপ তৈরি করেছে, তার একটা ধারণা পাওয়া যায় বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া ব্যবস্থাগুলোর দিকে তাকালে।
সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক সস্তায় স্টার্টআপ অর্থনীতিতে টাকা ঢালত। তবে যেসব ঝুঁকি এতে ছিল, তা ব্যাংকটিকে বিশেষভাবে দুর্বল করে তুলছিল। কিন্তু এটিতে ধস নামার কারণে উদ্বেগ তৈরি হয় যে একই রকম ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, ফেডারেল রিজার্ভ যেহেতু এখনো সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে, তাই ব্যাংক খাতের ঝুঁকি শেষ হয়ে যায়নি।
২১–২২ মার্চ ফেডের পরবর্তী নীতিসংক্রান্ত বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ওই বৈঠকে সুদের হার বাড়ানো হবে বলে তাঁরা মনে করেন না। এর আগে এ প্রতিষ্ঠান ধারণা করেছিল যে মার্চ মাসের বৈঠকে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হতে পারে।
আমানতকারীরা সুরক্ষিত
এসভিবির ধসের কারণে এর ছোট ব্যবসার গ্রাহকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন যে তাঁরা তাঁদের কর্মীদের বেতন দিতে পারবেন কি না। এফডিআইসি বলেছে, তারা কেবল আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত আমানতে সুরক্ষা দেবে। ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত পাওয়া হিসাব বলছে, ব্যাংকটির ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার আমানতের ৮৯ শতাংশেরই কোনো বিমা নেই।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো যেমন আমানতকারীদের রক্ষা করবে, তেমনই তা বৃহত্তর ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও অতিরিক্ত সমর্থন দেবে।
তবে কর্মকর্তা এবং নিয়ন্ত্রকেরা আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার দিকে নজর রাখছেন।