হোম লোন পেতে যেসব কাগজপত্র লাগবে

সাধ থাকলেও পর্যাপ্ত সামর্থ্য থাকে না বলে জমি বা ফ্ল্যাট কেনার সময় অনেকেই লোন নিয়ে থাকেন। কিন্তু চাইলেই আপনাকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোন দেবে না। কিছু নিয়মনীতি মেনে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় আবেদন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো যাচাই-বাছাই করে যদি আপনাকে যোগ্য মনে করে, তাহলেই ঋণ পাবেন।

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবুল ফজল জানান, ঋণ পেতে হলে ঋণগ্রহীতার বয়স ২৫ থেকে ৬৫ বছর হতে হবে। চাকরিজীবীদের মাসিক আয় হতে হবে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা।

আর ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালারাও এই ঋণের সুবিধা পাবেন। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের ব্যাংকঋণ পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। বেসরকারি চাকরিজীবী হলে আপনার চাকরির স্থায়িত্ব, মাসিক বেতন, ঋণখেলাপি, অন্যান্য আয় ইত্যাদির ওপর ব্যাংকঋণ পাবেন কি না বা পেলে কী পরিমাণ পাবেন, সেটা নির্ভর করে।

ফ্ল্যাট কেনার ঋণের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদামতো সব কাগজপত্র যথাযথভাবে জমা দিতে হবে। ক্যাপিটাল ল চেম্বার সহযোগী আইনজীবী সাঈদ হাসান জানান, ফ্ল্যাট বা জমির ক্রেতা ও ডেভেলপারের সঙ্গে সম্পাদিত ক্রয়ের রেজিস্ট্রি করা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হবে।

এ ছাড়া লাগবে জমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং অনুমোদিত নকশা ও অনুমোদনপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। ফ্ল্যাট কেনার রেজিস্ট্রি করা বায়না চুক্তিপত্রের মূলকপি এবং বরাদ্দপত্র লাগবে। বাড়ি নির্মাণঋণের জন্য প্রথমেই দরকার যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত নকশার সত্যায়িত ফটোকপি, মূল দলিল, নামজারি খতিয়ান, খাজনা রসিদের সত্যায়িত ফটোকপি ইত্যাদিও প্রয়োজন হবে। আরও লাগবে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস খতিয়ানের সত্যায়িত কপি।

জেলা বা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে ১২ বছরের তল্লাশিসহ নির্দায় সনদ (এনইসি) এবং সরকার থেকে বরাদ্দ পাওয়া জমির ক্ষেত্রে লাগবে মূল বরাদ্দপত্র ও দখল হস্তান্তরপত্র।

ফ্ল্যাট বা জমি কেনার সময় অনেকেই মর্টগেজ ঋণ বা বন্ধকী ঋণ নিয়ে থাকেন। ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে স্থায়ী সম্পদ জামানত রেখে তার বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করাকেই বলা হয় বন্ধকী ঋণ বা মর্টগেজ লোন। এই ঋণ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি সময়ের জন্য নেওয়া হয়। যার মেয়াদকাল ৫ থেকে ২০ বছর কিংবা তার বেশিও হতে পারে। মর্টগেজ লোনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের কাছে স্থায়ী সম্পদ জামানত হিসেবে রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত জামানত মাধ্যমটি হচ্ছে জমির দলিল। অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বা কোনো স্থায়ী সম্পদ কেনার উদ্দেশ্যে মর্টগেজ লোন নিয়ে থাকে।

আপনি যে জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন, সেটার দলিল কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা রেখে নির্দিষ্ট মেয়াদের ভিত্তিতে ঋণ নিতে পারেন। এবার ঋণকৃত অর্থ দিয়ে দ্রুত বাড়ি তৈরির কাজ সেরে ফেলতে পারেন। এই ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ এককালীন অথবা কতগুলো সমান কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়। যখন সুদাসলে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে, তখন জমাকৃত ঋণের দলিল ফেরত পেয়ে যাবেন।

মর্টগেজ লোন নিয়ে রাজধানীর কালাচাঁদপুরে বাড়ি তৈরি করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘সাধারণত মর্টগেজ লোন নেওয়া হয় একটি স্থায়ী সম্পত্তি বন্ধক রেখে অপর একটি স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় বা প্রকল্পে বিনিয়োগ করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করার জন্য। যেহেতু আমার সুযোগ ছিল, কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছিলাম না, তাই অর্থের জোগানদাতা হিসেবে আমি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে গিয়েছি।

ব্যাংক সহজে সম্পত্তি বন্ধক রেখে আমাকে ঋণদানে রাজি হয়েছে।’ এর সুবিধা সম্পর্কে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘মর্টগেজ রাখলে সহজে পর্যাপ্ত অর্থের জোগান পাওয়া যায়। সুদের হারও অনেক কম থাকে। কিস্তিতে ঋণের অর্থ পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। সম্পত্তি বিক্রয়ের প্রয়োজন পড়ে না। এ ছাড়া আপনি যে সম্পত্তিটি বন্ধক রাখবেন, সেটা আপনি নিজে ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু ব্যাংক সেটার মালিকানা পাবে, তবে ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া আপনি সেটা বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না, যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারবেন।’

মর্টগেজ লোন নিতে প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদনের সময় কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। ঋণ পাওয়ার পূর্বে চূড়ান্ত পর্যায়ে আরও কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—গত এক বছরের ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, ইউটিলিটি বিলের কপি, গত এক বছরের ব্যাংক বিবরণী, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, জামিনদারের কাগজপত্র, বন্ধকযোগ্য সম্পদের দলিলপত্র, যন্ত্রপাতি হলে মালিকানা সাপেক্ষে প্রমাণপত্র, স্যালারি সার্টিফিকেট ইত্যাদি।