সাক্ষাৎকার

এসি এখন মধ্যবিত্তের নাগালেই

একসময় এসি ছিল উচ্চবিত্তের বিলাসী পণ্য। তবে সময়ের পরিক্রমায় এখন এটি হয়ে উঠেছে সংসারের অন্যতম প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। সব শ্রেণির ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে এসি নির্মাণ ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কী ভূমিকা রাখছে? এসব বিষয়েই প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের হেড অব ব্র্যান্ড মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন সোহেল কিবরিয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারেক মাহমুদ নিজামী

প্রথম আলো:

সব ধরনের গ্রাহকের সক্ষমতা বিবেচনায় বর্তমানের এসির বাজার কতটুকু সহায়ক?

সোহেল কিবরিয়া: সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে বিশেষ করে জলবায়ুর পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের কারণে এটি এখন সব শ্রেণির মানুষের কাছে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতা চিন্তা করে এসির ব্র্যান্ডগুলো ক্রেতাদের জন্য ইএমআই বা কিস্তিতে এসি কেনার সুবিধা দিচ্ছে। এতে একবারে পুরো টাকা পরিশোধ না করেও ধাপে ধাপে মূল্য পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের জন্য এসি ক্রয় আরও সহজতর হয়েছে। বর্তমানের এসির বাজার ক্রেতাদের জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি সহায়ক। দামের বৈচিত্র্য, কিস্তির সুবিধা, অ্যানার্জি এফিশিয়েন্ট প্রযুক্তি এবং স্থানীয় ব্র্যান্ডের প্রতিযোগিতার কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির গ্রাহকদের জন্যও এসি কেনা সহজতর হয়েছে।

প্রথম আলো:

গড় মধ্যবিত্তের বাজেট লক্ষ রেখে এসির দাম নির্ধারণে প্রতিষ্ঠানগুলো কী কী বিষয় বিবেচনা করে?

সোহেল কিবরিয়া: প্রতিষ্ঠানগুলো এসির দাম নির্ধারণের সময় উৎপাদন খরচ, কাঁচামালের মূল্য এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের খরচ বিবেচনা করে। বাজারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। দেশীয় ব্র্যান্ড যেমন মিনিস্টার, ওয়ালটনও তুলনামূলক কম দামে এসি সরবরাহ করে, কারণ তারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড যেমন এলজি, স্যামসাং, গ্রি-ও কম দামের মডেল বাজারে আনে মধ্যবিত্তদের জন্য। সাধারণত ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে এক থেকে দেড় টন এসির প্রচুর চাহিদা থাকে।

প্রথম আলো:

বাজেট-ফ্রেন্ডলি এসি তৈরি করতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়?

সোহেল কিবরিয়া: এসি তৈরির উপাদান যেমন কম্প্রেসর, কনডেনসার এবং ইভাপোরেটরের খরচ কমানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কম দামের উপাদান ব্যবহার করলে এসির গুণগত মান কমে যেতে পারে, যা গ্রাহকদের সন্তুষ্টির ওপর প্রভাব ফেলে। আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এসির দাম বেড়ে যায়।

প্রথম আলো :

প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দাম কমিয়ে মান বজায় রাখা কতটা কঠিন?

সোহেল কিবরিয়া: এটি অত্যন্ত কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ, কম দামে ভালো পণ্য দিতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হয়, যা অনেক সময় মানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে এটি সম্ভব হয়। কম দামের এসির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ওয়ারেন্টি ও ফ্রি সার্ভিস দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। ভালো কাস্টমার সার্ভিস নিশ্চিত করতে হলে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়, যা দাম কমানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দাম কমানো ও মান বজায় রাখা কঠিন, তবে প্রযুক্তির উন্নয়ন, উৎপাদনদক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্মার্ট মার্কেটিং কৌশল অবলম্বন করে এটি সম্ভব। সফল ব্র্যান্ডগুলো মূলত এই কৌশলগুলো নিয়েই এগিয়ে চলছে।

প্রথম আলো:

কম দামে মানসম্মত এসি পেতে হলে কী কী বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত?

সোহেল কিবরিয়া: এ ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে। প্রথমত, বিদ্যুৎ সাশ্রয়-ক্ষমতা। আমরা জানি, বিদ্যুৎ বিলের চিন্তা প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে একটি বড় বোঝা। তাই অ্যানার্জি এফিশিয়েন্ট এসি কেনা উচিত। ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি কিনলে বিদ্যুৎ খরচ অনেক কমে যায়, যা দীর্ঘ মেয়াদে আপনার আর্থিক সাশ্রয় করবে। ঘরের আকার অনুযায়ী এসির ক্ষমতা নির্ধারণ করুন। ছোট ঘরের জন্য কম ক্ষমতার এসি যথেষ্ট। ১ টন, ১.৫ টন বা ২ টনের এসিগুলোর দাম বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তাই নিজের ঘরের আয়তন অনুযায়ী কিনতে হবে। ভুল ক্ষমতার এসি কিনলে শুধু বিদ্যুৎ বিলই বাড়বে না, এসির কার্যক্ষমতাও কমে যাবে। ব্র্যান্ড ও ওয়ারেন্টির কথা ভাবুন। ভালো ব্র্যান্ডের এসি কিনলে দীর্ঘস্থায়ী হয়। ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয়োত্তর সেবা দেখে এসি কিনুন। কারণ, একটি ভালো ব্র্যান্ড শুধু পণ্য বিক্রি করেই দায়িত্ব শেষ করে না, বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে আপনার পাশে থাকে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে এসি কিনলে কম দামে ভালো মানের এসি পাওয়া সম্ভব।

প্রথম আলো:

আপনাদের ব্র্যান্ডের এসির সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন দাম কেমন? কোন বাজেটের এসির প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ বেশি?

সোহেল কিবরিয়া: ১৮টির বেশি মডেলের এসি বাজারে নিয়ে এসেছে মিনিস্টার ব্র্যান্ড। ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার—দুই ধরনের এসিই রয়েছে মিনিস্টারের। এগুলোর বাজারমূল্য ৪৪ হাজার ৯৯০ থেকে ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকার মধ্যে। বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ১.৫ টনের ইনভার্টার এসির মডেলগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ বেশি।

বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতা চিন্তা করে বিভিন্ন দামের ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার এসি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে মিনিস্টার
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলো:

ভবিষ্যতে সারা দেশের সব ধরনের গ্রাহকের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে এসি পৌঁছে দিতে কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন?

সোহেল কিবরিয়া: এসির কাঁচামালের আমদানিতে শুল্ক কমালে দাম কমবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কর ছাড় ও ভর্তুকি সুবিধা প্রদান করলে গ্রাহকদের আরও সাশ্রয়ী মূল্যে এসি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে এসি পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে।

প্রথম আলো:

প্রথম আলো ডটকম আয়োজিত এসি মেলায় আপনারা অংশ নিয়েছেন। পাঠক এবং আপনাদের গ্রাহকদের উদ্দেশে কী বলার আছে?

সোহেল কিবরিয়া: অনলাইন এসি মেলায় অংশ নিতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই মেলা একদিকে যেমন গ্রাহকদের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিচ্ছে, অন্যদিকে আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। প্রিয় পাঠক ও গ্রাহকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমরা বুঝি, একটি এসি শুধু একটি যন্ত্র নয়, এটি আপনার পরিবারের আরাম ও শান্তির প্রতীক। তাই আমরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছি, যাতে প্রতিটি ঘরে আমাদের তৈরি এসি পৌঁছে দিতে পারি। আমরা জানি, সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের এসি পাওয়া কতটা জরুরি। তাই আমরা এমনভাবে দাম নির্ধারণ করি, যাতে মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্নপূরণ সহজ হয়। বিভিন্ন অফার ও কিস্তির সুবিধা তো থাকছেই, যা আপনার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। গুণগত মানের ব্যাপারে আমরা আপস করি না। আর বিক্রয়োত্তর সেবার ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষ কর্মীরা দ্রুত ও আন্তরিক সেবা প্রদানের জন্য সব সময়ই প্রস্তুত।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

সোহেল কিবরিয়া: আপনাকেও ধন্যবাদ।