রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার

পণ্য রপ্তানিফাইল ছবি: প্রথম আলো

আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছর শেষ হওয়ার ২ মাস ৮ দিনের মাথায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। পণ্য ও সেবা মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকৃত রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ হাজার ১০৭ কোটি ডলার।

সচিবালয়ে গতকাল রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে নতুন অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পদাধিকারবলে ইপিবির পর্ষদ চেয়ারম্যান বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাঁর সভাপতিত্বে বৈঠকে বাণিজ্যসচিব মো. সেলিম উদ্দিন, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, মহাপরিচালক বেবী রাণী কর্মকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা হবে যুক্তিসংগত। তবে গত অর্থবছরে যে আয় হয়েছে, সে তুলনায় চলতি অর্থবছরের আয় কমবে না।

রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা হবে যুক্তিসংগত। তবে গত অর্থবছরে যে আয় হয়েছে, সে তুলনায় চলতি অর্থবছরের আয় কমবে না।
সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা

বৈঠকে ২০২২–২৩ ও ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির রপ্তানি আয় এবং দপ্তরগুলোর তথ্যের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা হয়। ইপিবির উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির তথ্য মোটামুটি কাছাকাছি। তবে দুই অর্থবছরেই ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি আয় দেখানো আছে এনবিআরের তথ্যে। এক তথ্য এনবিআর একাধিকবার এন্ট্রি দিয়েছে বলেই তা হয়েছে, উপদেষ্টাকে এমন ধারণা দেন ইপিবির কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে জানিয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির পণ্য রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যানে গরমিল ১ হাজার ৮১ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, শুধু গত মে মাসে ৪০৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। ইপিবির হিসাবে, গত মে মাসে ৪০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি ২০২৩ সালের একই মাসের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম।

পণ্য রপ্তানির তথ্যে গরমিলের বিষয়টি ৩ জুলাই সামনে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা জানায়, এত দিন ইপিবির পরিসংখ্যান ধরে রপ্তানির হিসাব করা হতো। তবে সে অনুযায়ী দেশে রপ্তানি আয় আসছিল না। এ নিয়ে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পরে সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।

রপ্তানির কিছু তথ্যগত বিষয় নিয়ে গতকাল আলাপ হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তথ্য সংগ্রহ করার যেসব ব্যবস্থা আছে, সব কটি চালু থাকবে। সবার তথ্য সমন্বয় করে জানানো হবে সত্য চিত্র। একেক দপ্তর একেক রকম তথ্য দেবে, তা হবে না। দপ্তরওয়ারি কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে। তবে বিরাট অসংগতি দূর করা হবে। চলতি অর্থবছরের জন্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ধরা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রপ্তানির ক্ষেত্রে কর, শুল্ক–সংক্রান্ত যেসব বাধা আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করার তথ্য জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, রপ্তানি যেন বহুমুখীকরণ করা যায়, সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যসুবিধা (জিএসপি) পাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘জিএসপি দেওয়ার জন্য তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) বলা হয়েছে। আবার চেষ্টা করব। সব দিক থেকে তারা আমাদের প্রতি ইতিবাচক।’

সূত্রগুলো জানায়, চলতি অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নামে তিনটি আলাদা তথা বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে ইপিবি। বাণিজ্য উপদেষ্টা সবচেয়ে রক্ষণশীল অর্থাৎ ৫ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের প্রথমটি গ্রহণ করেন। বৈঠকে তিনি বলেছেন, এত আহামরি স্বপ্ন দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। দ্বিতীয় প্রস্তাবে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রকৃত আয়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশিতে ৫ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হয়। আর তৃতীয় প্রস্তাবে ২২ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ৬ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।

আগামী ২০২৫ সালে অনুষ্ঠেয় ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) আয়োজন ইপিবির গতকালের পর্ষদ বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছিল। সে অনুযায়ী মেলা জানুয়ারি মাসেই হবে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তবে তিনি বলেন, এটা জানুয়ারির ১ তারিখে শুরু হবে না। হবে দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিকে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি মেলা আয়োজনে সমস্যা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশসহ উন্নত প্রায় সব দেশেই ক্রিসমাসের ছুটির আমেজ থাকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। ফলে জানুয়ারির শুরুতে অনেকেই বাংলাদেশে আসতে পারবেন না। বিষয়টি মাথায় রেখে মেলা উদ্বোধনের চিন্তা করা হচ্ছে আগামী বছরের ৮, ৯ বা ১০ তারিখের দিকে।