ব্যাংকের খেলাপি হওয়া কোনো ঋণ সর্বোচ্চ তিনবার পুনঃ তফসিল করা যাবে। এর বাইরে প্রাকৃতিক কারণে কোনো ঋণ খেলাপি হলে বিশেষ বিবেচনায় আরও একবার তা পুনঃ তফসিল করা যাবে। আর পুনঃ তফসিলের আওতায় থাকা ঋণ নগদে আদায় হলেই কেবল তা যুক্ত হবে ব্যাংকের আয়ে। আবার ঋণ পুনঃ তফসিলের পর ছয় মাস কিস্তি পরিশোধ না করলে সেই ঋণ সরাসরি খেলাপি হয়ে যাবে।
নানা সমালোচনার মুখে ব্যাংকঋণ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠনের নীতিমালা সংশোধন করে এসব বিধান যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আগের মতো এককালীন জমা ও ঋণের মেয়াদ বহাল রাখা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে ঋণখেলাপিদের বড় ধরনের ছাড় দেওয়া হয়। খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের বদলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল। গত ১২ জুলাই নতুন গভর্নর হিসেবে সাবেক অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার যোগ দেওয়ার পরপরই এ নীতিমালা জারি করা হয়।
গত ১৮ জুলাই জারি করা নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার ক্ষেত্রে এককালীন জমা বা ডাউন পেমেন্ট কমিয়ে আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের পর পাঁচ থেকে আট বছরে পরিশোধেরও বিধান করা হয়। আগে পুনঃ তফসিল করা ঋণ সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে পরিশোধের বিধান ছিল। ওই নীতিমালা জারির পর তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দেয়। ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই নীতিমালাকে ঋণখেলাপিদের জন্য গণছাড় হিসেবে আখ্যায়িত করে। এরপরই ওই নীতিমালায় কিছু সংশোধন এনে গতকাল আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গতকালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সাধারণভাবে একটি ঋণ সর্বোচ্চ তিনবার পুনঃ তফসিল করা যাবে। তবে গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতি হলে সে ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় কোনো ঋণ চতুর্থবার পুনঃ তফসিল করা যাবে। চারবার পুনঃ তফসিল সুবিধা নেওয়ার পরও কোনো ঋণ খেলাপি হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন কোনো ঋণ অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরিত হলেও আগের পুনঃ তফসিলের ধারা প্রযোজ্য হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র খোলার পর সেই দায় ঋণে পরিণত হলে সেই ঋণ পুনঃ তফসিল করা যাবে না। ব্যাংকগুলো নিয়ম মেনে ঋণ পুনঃ তফসিল করছে কি না, তা পরিদর্শন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরিদর্শনকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ শ্রেণীকরণের যে মান নির্ধারণ করবে, সেই মানেই ঋণ শ্রেণীকরণ করতে হবে।
২০২০-২১ সালে করোনার কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়া ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে ঋণ পরিশোধে ছাড় দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই ছাড় উঠে যাওয়ায় পর অনেকে খেলাপি হয়ে পড়ছেন। এ জন্য ব্যাংকের হাতে ঋণ পুনঃ তফসিলের পুরো ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ছাড়।