বিমা খাতের কিছু সমস্যা বাজেটে, আর কিছু সমস্যা বাজেটের পর সমাধান হবে
জীবনবিমা গ্রাহকের মুনাফার ওপর থেকে ৫ শতাংশ মূলধনি কর (গেইন ট্যাক্স) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার এবং পুনর্বিমা প্রিমিয়ামের কমিশনের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাতিলেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিআইএ আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের সঙ্গে বৈঠক করে এসব দাবি জানায়।
বিআইএর সভাপতি শেখ কবির হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংগঠনটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ইস্টল্যান্ড ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ও মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ। এ সময় বিআইএ সভাপতি শেখ কবির হোসেন বিমা খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন।
পাঁচ কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পি কে রায়, মো. ইমাম শাহীন, মো. জালালুল আজিম, ফারজানা চৌধুরী ও নাসির উদ্দিন আহমেদ চলমান স্বাস্থ্যবিমা, ডিজিটাল স্ট্যাম্প ও ডিজিটাল স্বাক্ষর–সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও বিমা খাতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। অন্যদের মধ্যে সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, মজিবুল ইসলাম, বি এম ইউসুফ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রগুলো জানায়, বিমা খাতের জন্য প্রস্তাবিত সুপারিশের কিছু বাজেটে, কিছু বাজেটের পর প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানান অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী। এ ব্যাপারে তাঁরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলাপ করবেন বলেও জানান।
বিআইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো বিমা গ্রহীতা জীবনবিমার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এতে প্রিমিয়ামের অঙ্ক বেড়ে যায়, ফলে গ্রাহক স্বাস্থ্যবিমা করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। বিষয়টি স্বাস্থ্যবিমা প্রসারের জন্য অন্তরায়।
জীবনবিমা গ্রাহকের মুনাফার ওপর থেকে ৫ শতাংশ মূলধন কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিআইএ বলেছে, ভারতসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এ ধরনের কর আরোপের উদাহরণ নেই। ২০১৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, দেশের সব জীবনবিমা কোম্পানির পলিসি গ্রাহকদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপ করা আছে। ফলে দেশের সব জীবনবিমা পলিসি গ্রাহকদের সংখ্যা কমে গেছে। এটা উঠিয়ে নেওয়া না হলে জীবনবিমা খাতের ব্যবসা শুধু কমতেই থাকবে না, কোম্পানিগুলোর টিকে থাকাও কষ্টকর হবে।
বিআইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, পুনর্বিমা প্রিমিয়ামের কমিশনের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য নয়। কিন্তু বিমা কোম্পানি প্রিমিয়াম নিলেই গ্রাহকের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হয়। এই ভ্যাট জমা হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। বিমা কোম্পানি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এই প্রিমিয়ামের একটি অংশ পুনর্বিমাকারীকে দিয়ে পুনর্বিমা নেয়। এতে বাড়তি খরচ হয়।
যেহেতু প্রিমিয়াম গ্রহণকালে সম্পূর্ণ প্রিমিয়ামের ওপর আইন অনুযায়ী ভ্যাট নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয় এবং এই প্রিমিয়ামেরই একটি অংশ পুনর্বিমাকারীকে দিতে হয়। ফলে পুনর্বিমা প্রিমিয়ামের কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের ভ্যাট নেওয়ার অর্থই হচ্ছে দ্বৈত কর।
বিআইএ আরও বলেছে, দেশের সব জীবন ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানির বিমা এজেন্টদের কমিশনের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর পরিশোধের বিধান রয়েছে, যা প্রত্যাহার করা উচিত।