পেটিএম অর্থ লেনদেন করতে পারবে না, ভারতজুড়ে অনিশ্চয়তা

ভারতের একটি পেটিএম সেবাকেন্দ্রছবি: রয়টার্স

ভারতের অন্যতম প্রধান ডিজিটাল লেনদেন প্রতিষ্ঠান পেটিএম বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিবিধান মানছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেটিএম পেমেন্টস ব্যাংকের ওপর খড়্গহস্ত হওয়ার পর দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু ও অন্যান্য জায়গায় বিক্রেতা, চা-কফির দোকান ও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। আর এর সুযোগ গ্রহণ করছে পেটিএমের প্রতিদ্বন্দ্বীরা।

ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, ফোনপে ও গুগুল পে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। তারা তাদের প্ল্যাটফর্মে বিনা খরচে পেটিএম অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে পেটিএমের অনেক প্রতিনিধি বিভিন্ন মার্চেন্ট হিসাব অন্য ব্যাংকে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। পেটিএম ব্যবহারকারীদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে তাদের ব্যাংক হিসাব ‘নিরাপদ করতে ও দ্রুত লেনদেনের জন্য’ অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে বলছে। তবে তারা নিশ্চয়তা দিয়েছে যে গ্রাহকদের অর্থ নিরাপদ রয়েছে।

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সব মৌলিক লেনদেন বন্ধ করতে পেটিএম পেমেন্টস ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে। পেটিএমের ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (ইউপিআই) সেবাও বন্ধ করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একই সঙ্গে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করতেও পেটিএমকে নির্দেশ দিয়েছে। ফলে তারা আমানত নিতে পারবে না, বন্ধ থাকবে অর্থ উত্তোলনপ্রক্রিয়া।

ফোনপের একজন মুখপাত্র ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, আর্থিক হিসাব বদল করতে চান, এমন মার্চেন্টের সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে জিপে (গুগল পে) একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁরা মার্চেন্ট ও গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী নানা রকম সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন, তবে কোনো মার্চেন্টকেই আলাদা কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।

১ ফেব্রুয়ারি পেটিএমের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ভবেশ গুপ্তা পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের জানিয়েছেন, কমবেশি চার কোটি মার্চেন্টকে তাদের হিসাব অন্য ব্যাংকে সরিয়ে নিতে হবে এবং এ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় দিল্লির একটি বিপণিবিতানের দোকানিরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার পেটিএমের প্রতিনিধিরা তাঁদের কাছে এসেছিলেন। ফটোকপির দোকানের মালিক সুশান্ত জানান, সকালে একজন এসে বললেন, ‘আমাদের হিসাব বন্ধ হয়ে যাবে, তাই আমি এটি আমার এসবিআই (স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া) হিসাবে বদলি করে নিয়েছি।’

তবে অনেকেই এখন ডিজিটাল লেনদেনব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। পেটিএমের প্রতিদ্বন্দ্বীরাও একই সমস্যায় পড়েন কি না, সে নিয়েও অনেকে উদ্বিগ্ন। এর কারণ হলো, খুচরা বিক্রেতারাও এখন অনলাইন লেনদেন পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।

কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডারস দেড় লাখের মতো খুচরা ও ছোট ব্যবসাকে প্রতিনিধিত্ব করে।

এর জাতীয় সম্পাদক প্রাভীন খান্ডেওয়াল বলেন, এমনকি সবজিওয়ালাও এখন ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, ঠিক কী বিধিবিধান পরিপালন হয়নি বলে রিজার্ভ ব্যাংক এত বড় একটি পদক্ষেপ নিল, সেই বিষয়ে তথ্য কম। আমরা কি এখন এমন অ্যাপ ব্যবহার করব, যেগুলো ইউপিআই এবং ওয়ালেট সেবা দিচ্ছে? বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কি এগুলো বেশি নির্ভরযোগ্য?

বিভ্রান্তি রয়ে গেছে

পেটিএম পেমেন্টস ব্যাংকের হিসাবধারীরা তাঁদের পরিবারের কাছে আমানত পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

অটোরিকশাচালক ও ছোট মুদিদোকানের মালিকেরা ঠিক নিশ্চিত নন কোন ব্যবস্থাটি কাজ করবে।

অনেকেই বুঝতে পারছেন না, ঠিক কী ঘটে গেছে। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাসের একজন দোকানদার বলেন, ‘একজন আমাকে বললেন যে রিজার্ভ ব্যাংক পেটিএম অধিগ্রহণ করেছে এবং আমাদের অর্থ নিরাপদ আছে। আমি আমার কিউআর কোড আগামীকাল ফোনপেতে নিয়ে নেব। কিন্তু ভয়েস সুবিধা নিতে চাইলে আমার ৫০০ রুপি অতিরিক্ত খরচ হবে।’

রেস্তোরাঁগুলো মনে করছে, ক্যাশ লেনদেন বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে আগামী কিছুদিন অন্যান্য ওয়ালেটে লেনদেন।

মুঠোফোনের খুচরা দোকানিরা জানিয়েছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা পেটিএমের মাধ্যমে দেওয়া কোনো অর্থ গ্রহণ করবেন না। বিভূতি প্রসাদ নামের এক দোকানি বলেন, ‘প্রতিদিন একটি দোকানে ৫-১০ লাখ রুপির ব্যবসা হয়। এর ৭০ শতাংশ অর্থ নেওয়া হয় ইউপিআই ও কার্ডের মাধ্যমে। এই অর্থ নিয়ে আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে পারব না। এ কারণে কী ঘটেছে, তা না জানা পর্যন্ত আমরা পেটিএম থেকে অর্থ নেওয়া বন্ধ রেখেছি।’