বৈদেশিক বাণিজ্য
আমদানি খরচ ১৬% কমেছে, ডলার–সংকট কতটা কমল
বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে আইএমএফ যে পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে বলেছিল, তা পালন করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডলার-সংকটের পরিস্থিতিতে নানা কড়াকড়ি আরোপ ও কর বাড়ানোর ফলে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের আমদানি ব্যয় প্রায় ১৬ শতাংশ কমেছে। এর আগের অর্থবছরে আমদানি খরচ বেড়েছিল প্রায় ৩৬ শতাংশ। ফলে শুরু হয় ডলার-সংকট, যার প্রভাব পড়ে পুরো অর্থনীতিতে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি বেড়ে প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়। সে জন্য তা নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে আমদানি খরচ কমেছে, কিন্তু তাতে ডলার-সংকট কতটা কাটল, সেই প্রশ্ন উঠছে এখন।
সরকারি ও বেসরকারি খাতের কিছু আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত প্রায় অর্ধেক করে ফেলেছে। গত বৃহস্পতিবারও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বিক্রি করেছে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ফলে সেদিন রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৯৫৩ কোটি ডলারে নেমেছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ আছে ২ হাজার ৩২৩ কোটি ডলার। আর নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ আরও কম, মানে ২ হাজার কোটি ডলারের কম। বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে আইএমএফ যে পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে বলেছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা পালন করতে পারেনি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলার-সংকট আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। তবে সংকট এখনো চলমান। আমরা চাইলেও গ্রাহকের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছি না। আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য-ব্যবসা করা যাচ্ছে না। বিদেশি ব্যাংকগুলো ৬ মাসের বেশি সময়ের জন্য ঋণ বা সীমা দিচ্ছে না। আমরা প্রবাসী ও রপ্তানি আয় দ্রুত এনে সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এভাবে কত দিন চলবে, বুঝতে পারছি না।’
ডলার-সংকট আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। তবে সংকট এখনো চলমান। আমরা চাইলেও গ্রাহকের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছি না। আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য-ব্যবসা করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২০-২২-২৩ অর্থবছরে আমদানিতে খরচ হয়েছে ৭৫ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৫০৬ কোটি ডলার। তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি খরচ হয়েছিল ৮৯ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৯১৬ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি খরচ ছিল ৬৫ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৫৫৯ কোটি ডলার। এখন প্রতি মাসে যে পরিমাণ আমদানি ব্যয় হচ্ছে, তা রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে মিটে যাচ্ছে। তবে বিদেশি ঋণ পরিশোধ, সেবা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা খরচ বাবদ বিদেশে অর্থ পাঠানো হচ্ছে। আবার বিদেশি যেসব দায় রয়েছে, সেগুলোও শোধ করতে হচ্ছে। বিদেশি যেসব ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে ঋণসীমা দিত, সময়মতো পাওনা না পাওয়ায় তাদের কেউ কেউ নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি হওয়ায় চলে গেছে আবুধাবি ইসলামিক ব্যাংক। এ ছাড়া জাপানের এসএসনপিসি ব্যাংক, দুবাইয়ের মাশরেক, ভারতের এক্সিমসহ বিদেশি কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছে। এদিকে সংকটের কারণে একপর্যায়ে ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার কেনাবেচা প্রায় বন্ধ হয়ে গেলেও এখন তা আবার শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংকে ১৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সারোয়ার হোসেন প্রথম আলাকে বলেন, আমদানি কমলেও দেশে কোনো পণ্যের ঘাটতি হয়নি। এখন প্রায় সব ঋণপত্রের মূল্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলে আমদানির মাধ্যমে বেশি অর্থ বাইরে পাঠানোর সুযোগ নেই। ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে। ফলে সংকট এখন আগের মতো নেই।
১ আগস্ট থেকে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করে দাম দিচ্ছে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এই দাম নির্ধারণ করে। তবে বাস্তবে এর চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা হয়।