খেলাপি ঋণ নীতিমালা
নীতিমালার পক্ষে এবিবির সাফাই, ভিন্নমত অন্যের
ব্যাংক খাতের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে গতকাল কথা বলেন এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন।
ঋণখেলাপিদের ছাড় দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন। তিনি বলেছেন, এটি একটি যুগান্তকারী সংস্কার।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এবিবির চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ঋণখেলাপিদের ছাড় দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা, ডলারের বাজার, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল নিয়েও কথা বলেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে এবিবির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন এবিবি নেতারা।
এবিবি ঋণখেলাপিদের ছাড় দেওয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগকে যুগান্তকারী সংস্কার হিসেবে দাবি করলেও এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান মনে করেন, এ উদ্যোগ ব্যাংকের জন্য খুব খারাপ হবে। কারণ, যাঁরা ঋণের টাকা ফেরত দেন না, তাঁরা বেশি সুবিধা পাবেন। এবিবির সংবাদ সম্মেলনের পর গতকাল সন্ধ্যায় এ বিষয়ে আনিস এ খানের মতামত জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন।
এদিকে গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ঋণখেলাপিদের বিষয়ে আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ ছিল বেশি। মূল হিসাবটা তাঁরাই করতেন। এখন সেই দায়িত্ব ব্যাংকের হাতে থাকবে। এতে করে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়বে। অনেকে বলছেন, ‘ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি তা মনে করি না। আমি মনে করি, এখন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হবে।’
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বর্তমান গভর্নর যোগ দেওয়ার পর নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেকগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন দেশের অনেক সংস্থার মধ্যে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান গভর্নরের সক্রিয় কর্মকাণ্ডের ফলে।
অনেকে বলছেন, ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি তামনে করি না।
ডলার বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, আস্থার সংকটে ডলারের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। এখন আস্থা ফেরাতে হলে আন্তব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের যে দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেটি কার্যকর করতে হবে। ব্যাংকগুলো যদি ওই দামে লেনদেন করতে পারে, তাহলে বাজারের অস্থিরতা কমে আসবে। তাতে দুই সপ্তাহের মধ্যে ডলারের বাজার স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ডলারের বাজারের এ অস্থিরতায় কিছু ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউস বেশি লাভবান হয়েছে। চাপে পড়েছে ছোট ব্যাংকগুলো, যাদের প্রবাসী আয় কম। তাই এসব ব্যাংককে বেশি দামে ডলার কিনে ঋণপত্র নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে। এতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আমদানিকারকদের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও চাপে পড়ছে।
অনুষ্ঠানে সিএমএসএমই খাতের জন্য গঠিত ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিলের প্রশংসা করা হয়। এ ধরনের উদ্যোগ এ
খাতকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করেন এবিবি চেয়ারম্যান।
কোনো চাপে এ সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনো ধরনের চাপে নয়, দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে ব্যাংক খাতের চলমান বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছি। যাতে সবার কাছে ব্যাংক খাত নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকে।’
এদিকে এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা ব্যাংকের ঋণের টাকা ফেরত দেন না, অর্থাৎ যাঁরা খারাপ গ্রাহক—নতুন নীতিমালা তাঁদের জন্য ভালো হয়েছে। কারণ, অল্প টাকা জমা দিয়েই তাঁরা নিয়মিত গ্রাহক হতে পারবেন। ঋণ পরিশোধে পাবেন দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা। আর সবচেয়ে খারাপ হবে ব্যাংকের জন্য। বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোর সম্পদ ও দায়ে অসামঞ্জস্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। তা আরও প্রকট হবে। ব্যাংকগুলোর কাছে এক বছরের বেশি মেয়াদি তহবিল নেই। এ ব্যাংকগুলোকে এখন খেলাপি গ্রাহকদের বাড়তি ছয় থেকে আট বছর সময় দিতে হবে। ফলে তারল্য সমস্যায় পড়বে অনেক ব্যাংক। যার প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে ও কর্মসংস্থানে।