যেখানে উৎপাদন হয়, সেখানেই একটি মরিচের দাম দেড় টাকা
পাবনার বেড়া পৌর এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রতন আচার্য। সাধারণত প্রতি শুক্রবার তিনি সপ্তাহের বাজার করেন। এ জন্য আজও শুক্রবার হওয়ায় তিনি কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্য কিনতে সকালে বেড়া বাজারে আসেন। কিন্তু যখন এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ কিনতে গেলেন, তখন দাম শুনেই হতভম্ব হয়ে পড়েন তিনি। কারণ, তাঁর কাছে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম চাওয়া হয় ৬০০ টাকা। তাই বাধ্য হয়ে এক পোয়ার পরিবর্তে ৩০ টাকায় ৫০ গ্রাম মরিচ কেনেন।
মরিচ কেনার পর রতন আচার্য কৌতুহলবশত গুনে দেখেন, মাঝারি আকারের ২১টি কাঁচা মরিচ পেয়েছেন। তার মানে প্রতিটি মরিচের দাম পড়েছে ১ টাকা ৪৩ পয়সা, মানে প্রায় দেড় টাকা।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে রতন আচার্য বলেন, ‘বাজারে প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেশি। এর মধ্যে কাঁচা মরিচের দাম হিসাব করলে একেকটার দাম পড়েছে প্রায় দেড় টাকা। এ অবস্থায় মরিচ খাওয়া বাদ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখতেছি না।’
বেড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. সেরাই বলেন, ‘ঈদের আগের দিনও ৪০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বেচছি। আর আজকেই হয়া গেল ৬০০ টাকা। আজ সকালে পাইকারি হাটের থিক্যা ৫৫০ টাকা কেজি দরে মরিচ কিন্যা আনছি। কৃষকেরা হাটে খুব কম মরিচ আনতেছে। এই জন্য দাম এত বেশি। ৫০ গ্রাম মরিচ মাপলে গুনতিতে ২০ থেকে ২১টা হতেছে।’
আমাগরে এই হাটে স্বাভাবিক অবস্থায় দৈনিক তিন-চার শ মণ কাঁচা মরিচ ওঠে। অথচ আজ ১৫ মণের মতো মরিচ উঠিছে। জমিতে ফলন না থাকায় মরিচ কম উঠতেছে। আজ হাটে পাইকারিতেই ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হইছে।বেংকু মিয়া, আড়তদার, করমজা চতুর হাট, সাঁথিয়া উপজেলা, পাবনা।
পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় সপ্তাহ দুয়েক ধরে কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার প্রতি কেজির দাম বেড়ে ৬০০ টাকায় উঠে গেছে। দুই উপজেলার কাঁচামাল ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা জানান, এর আগে কখনোই এত দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখেননি তাঁরা। এ দুই উপজেলা অন্যতম উৎপাদন এলাকা হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি হওয়ার জন্য কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ফলন বিপর্যয়কে দায়ী করেছেন।
সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা কাঁচা মরিচ উৎপাদনের এলাকা হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ২ হাজার ৯৪ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে।
কৃষক ও উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুই উপজেলায় মরিচের আবাদ শুরু হয় ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে। পুরো জুলাই মাসে খেত থেকে মরিচ পাওয়া যায়। এরপর বৃষ্টি ও বর্ষায় মরিচগাছগুলো মরে যেতে থাকে। কিন্তু এবার প্রথমে এপ্রিল ও মে মাসে খরা দেখা দেয় এবং সম্প্রতি অতিবৃষ্টি শুরু হয়। যে কারণে বেশির ভাগ মরিচগাছের মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে জন্য অধিকাংশ গাছেই মরিচের ফলন নেই বললেই চলে।
বেড়া পৌর এলাকার বড়শিলা গ্রামের মরিচচাষি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করছিল্যাম। কিন্তু প্রচণ্ড খরায় বেশির ভাগ গাছ নষ্ট হয়া গেছে। গাছগুল্যা কুনুরকমে টিক্যা থাকলেও তাতে মরিচ খুব কম আসতেছে।’
সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ নতুনপাড়া গ্রামের মরিচচাষি রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘সোয়া বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করছি। শুরুতে মরিচের ভালো ফলন হলেও পরে খরা আর প্রচণ্ড গরমে মরিচগাছগুলো কুঁকড়ায়া যায়। এতে ফুল আসাই বন্ধ হয়া যায়। গত ২০ দিন ধইর্যা জমির থ্যা কুনু মরিচ তুলব্যার পারি না। তবে গাছে আবারও ফুল আসা শুরু হইছে। আশা করতেছি শিগগিরই আমাগরে এলাকায় মরিচের অভাব দূর হবি।’
সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুর হাটের কাঁচা মরিচের আড়তদার বেংকু মিয়া বলেন, ‘আমাগরে এই হাটে স্বাভাবিক অবস্থায় দৈনিক তিন-চার শ মণ কাঁচা মরিচ ওঠে। অথচ আজ ১৫ মণের মতো মরিচ উঠিছে। জমিতে ফলন না থাকায় মরিচ কম উঠতেছে। আজ হাটে পাইকারিতেই ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হইছে।’
সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা যথাক্রমে সঞ্জীব কুমার গোস্বামী ও নুসরাত কবীর আলাদা আলাপে প্রথম আলোকে বলেন, খরার কারণে এবার মরিচের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে গাছে এখন ফুল আসছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শিগগিরই ফলন বেশ বাড়বে। আরও এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত এ এলাকায় মরিচ পাওয়া যাবে।