বাজারদর
কমছে সবজির দাম, চালের দাম বাড়তি
ব্রয়লার মুরগি, মুরগির ডিম ও মাছ এখনো আগের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সবজির দাম আরও কিছুটা কমেছে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে চালের দাম। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি, মুরগির ডিম ও মাছ এখনো আগের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা হয়। এ সময় বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় ঢাকার খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, বিশেষ করে কাঁচা শাকসবজির দাম অনেক বেড়ে যায়। এখন ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে; সঙ্গে দামও কমছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট, শেওড়াপাড়া ও মিরপুর দুয়ারীপাড়া এলাকার বাজারে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এক বছরে বেতন যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। এভাবে আর কত দিন পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতে পারব, জানি না।শামসুল আলম, তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী, দুয়ারীপাড়া বাজার, মিরপুর।
বেড়েছে চালের দাম
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বিভিন্ন প্রকার চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যেমন সপ্তাহখানেক আগে বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মোটা চালের (স্বর্ণা) দাম ছিল ৪৮-৫২ টাকা; যা গতকাল ৫২-৫৪ টাকায় বিক্রি হয়।
অন্যান্য নিত্যসামগ্রীর মধ্যে পেঁয়াজ, চিনি, ব্রয়লার মুরগি ও মুরগির ডিমের দাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে। যেমন বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা। কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন দামেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত বছর এমন সময়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬৫-৮০ টাকা।
গতকাল প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫-১০ টাকা দাম বেড়েছে। ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম এখন ১৮০-১৯০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে ১৭০ টাকা দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল। আর বর্তমানে সোনালি মুরগির কেজি ২৮০-৩০০ টাকা। এ ছাড়া ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়ে ১৫০-১৬০ টাকা হয়েছে।
সবজির দাম কমছে
গত তিন দিনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় সবজির সরবরাহ বেড়েছে। এ কারণে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। পেঁপে, লাউ, ঢ্যাঁড়স, ধুন্দুল ও চিচিঙ্গার কেজি ৪০-৬০ টাকা; আবার বেগুন, বরবটি, করলা ও কাঁকরোলের মতো সবজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকায়।
বাজারে আলুর কেজি অনেক দিন ধরেই ৬০-৬৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। তবে কাঁচা মরিচের দাম এখনো অনেক বাড়তি। গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় ২০০-২৪০ টাকা। আর কারওয়ান বাজারে মরিচের পাইকারি দাম ছিল ১৬০-২০০ টাকা। অবশ্য সহিংসতার মধ্যে গত সপ্তাহে ঢাকায় মরিচের দাম বেড়ে ৬০০-৮০০ টাকায় উঠেছিল।
ব্যবসায়ীরা যা বলছেন
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য পরিবহনে ট্রাকপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বাড়তি লাগছে বলে অভিযোগ তাঁদের। বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার জানান, সংঘর্ষের কারণে কয়েক দিন ধরে পণ্যবাহী গাড়ির চালকেরা স্থানীয় পর্যায় থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকায় আসতে শঙ্কায় ছিলেন। সেখান থেকে সরবরাহ পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। তবে সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও দু-চার দিন সময় লাগতে পারে।
গতকাল মিরপুরের দুয়ারীপাড়া বাজার এলাকায় কথা হয় স্থানীয় তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী শামসুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক বছরে বেতন যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। এভাবে আর কত দিন পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতে পারব, জানি না।’