ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমদানি কমার পাশাপাশি তিন-চার গুণ বেড়ে গেছে সারের দাম। এ সংকট মোকাবিলায় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু শতবর্ষী পুরোনো এক বিকল্প উপায় খুঁজে নিয়েছে। দেশটি সামুদ্রিক পাখির মল ব্যাপক আকারে সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের
একসময় সামুদ্রিক পাখির মল বা গুয়ানো বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ ও বিক্রি হতো। বিশ্বের অনেক সমুদ্র-তীরবর্তী ও দ্বীপদেশের মতো পেরুতেও এভাবে পাখির মল সংগ্রহ করা হতো। আর কাজটি করতেন আফ্রিকার ক্রীতদাস, স্থানীয় আদিবাসী ও চীনা শ্রমিকেরা।
মাছ খাওয়া সামুদ্রিক পাখির মলমূত্র বা গুয়ানো খুবই পুষ্টিগুণসম্পন্ন জৈব সার। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে উদ্ভিদের বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশিয়ামের মতো উপাদান থাকে। তাই অনেক আগে থেকেই এটি দেশে দেশে সার হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে এসেছে।
এমনকি পাখির মলে তৈরি এই গুয়ানো সারের জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ চিলি। ১৮৮০-এর দশকে প্রতিবেশী দেশ পেরু ও বলিভিয়ার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ করেছিল চিলি। তবে আধুনিক প্রযুক্তিতে কারখানায় তৈরি সারের প্রসার বাড়লে গুরুত্ব কমে যায় প্রাকৃতিক গুয়ানোর।
সরবরাহের ঘাটতির কারণে পেরুতে আমদানি করা সারের দাম এখন তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, একটি ৫০ কেজি ইউরিয়ার বস্তার দাম তিন গুণ বেড়েছে। গত সাত বছরের গড় তুলনায় চলতি বছরে আমদানি কমেছে ৫৮ শতাংশ।
এ অবস্থায় উপকূলীয় দ্বীপ ও উপদ্বীপ থেকে সামুদ্রিক পাখির মল সংগ্রহের জন্য বিশেষ কার্গো পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে পেরু সরকার। অন্যদিকে আমদানি করা সার কেনার সামর্থ্য না থাকায় পেরুর কৃষকেরাও এখন পাখির মল ব্যবহারে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।
রাজধানী লিমার নিকটবর্তী কৃষিনির্ভর শহর মালার কৃষক সেগুন্ডো ক্রুজ বলেন, দ্বীপগুলো থেকে পাওয়া গুয়ানো খুবই ভালো সার। দামও সাধ্যের মধ্যে। তবে তিনি জানিয়েছেন, রাসায়নিক সারের চেয়ে গুয়ানো ব্যবহার করা হলে ফসল পাকতে বেশি সময় লাগে। এ নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন তিনি।
কৃষক সেগুন্ডো ক্রুজ গার্ডিয়ানকে বলেন, সারের দাম বাড়ার কারণে ফসল উৎপাদন দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে। ফলে বাজারে খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে। একদিকে আমদানি করা সারের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে, অন্যদিকে দেশে চাহিদা অনুসারে গুয়ানোও (পাখির মল) নেই। এতে ফসল উৎপাদনে প্রভাব পড়বে।
পেরুর গ্রামীণ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এডুয়ার্ডো জেগারা বলেন, গুয়ানো খুবই ভালো সার, কিন্তু এর সরবরাহে প্রাকৃতিক সীমা আছে। বছরে ৩০-৪০ হাজার টন সার উত্তোলন করা সম্ভব, যা দেশের মোট সারের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি পরবর্তী দারিদ্র্য, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও জলবায়ু সংকটের কারণে পেরুর খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী ভুক্তভোগী হবে।