দেড় বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে আছে। বিবিএসের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আগস্টে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে। গ্রাম ও শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশের বেশি। এ চিত্র তো ভয়াবহ। প্রায় দেড় বছরের অধিক সময় ধরে দেশে এ উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। নিম্ন আয়ের মানুষ (এমনকি মধ্যবিত্ত) এ রকম দীর্ঘায়িত উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তা ধারণা করা কি কঠিন?
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার এখন পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বহু দেশ সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখিয়েছে। কিন্তু আমাদের মুদ্রানীতিতে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন সুদের হার স্থির রাখা হয়েছে। পণ্যের দাম কমাতে আমদানিতে কর ছাড় দেওয়া হয়নি।
বাজার ব্যবস্থাপনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে নৈরাজ্য এবং তদারকির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছে বাজার জিম্মি হয়ে গেছে। তাঁরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছেন।
গ্রামে কেন খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি—এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। গ্রামের মানুষ একদিকে উৎপাদক অন্যদিকে ভোক্তা। আর শহরের মানুষ শুধু ভোক্তা। তাহলে গ্রামে কেন খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়বে? বিবিএসের হিসাবে কি তবে গরমিল আছে?
যখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়ার কথা, তখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির ঠিকমতো প্রয়োগ নেই। বাজার ব্যবস্থাপনায়ও তদারকির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। মূল্যস্ফীতির এই অবস্থার উন্নতির জন্য মুদ্রা ও রাজস্বনীতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে দরকার দ্রুত কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানকে (যেমন প্রতিযোগিতা কমিশন) আর শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাপনার নৈরাজ্য ঠেকাতে হবে।