কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের চণ্ডীবের উত্তর পাড়ায় মিন্নত আলীর খামার। এতে আছে ৬ হাজার লেয়ার মুরগি। গত বুধবার ভোরে তিনি ডিম পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৬৫টি। সেই ডিম কিনতে ভোরেই তাঁর খামারে হাজির হন পাইকারেরা। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে মিন্নত আলী কোনো দরদামে যাচ্ছেন না; বরং অপেক্ষা করছেন ‘কথিত সিন্ডিকেটের’ খুদে বার্তার (এসএমএস) জন্য।
অবশেষে ঢাকা থেকে খুদে বার্তা আসে। সেখানে প্রতি হালি ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ৪৬ টাকা। সেই দামেই ডিম বিক্রি করলেন মিন্নত আলী। তাতে তাঁর খামারের প্রতিটি ডিমের দাম পড়ে ১১টা ৫০ পয়সা। এরপর এক হাত বদলে আড়তদারদের কাছ থেকে পাইকারেরা প্রতিটি ডিম কেনেন ১২ টাকায়। আর আড়তদার থেকে পাইকারি ও খুচরা দোকান হয়ে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রতিটি ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়ায় এলাকাভেদে সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। কয়েক দিন আগেও এ দাম খুচরায় ১৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
মিন্নত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাতে কিছুই নেই। দর ঠিক করে সমিতি বা সিন্ডিকেট। তাদের কাছ থেকে এসএমএস আসে, সেই দামে আমরা ডিম বিক্রি করি।’ একই তথ্য দেন ভৈরবের আরও কয়েকজন খামারি। তাঁরা জানান, ডিমের দাম নির্ধারণকারী ‘মূল সিন্ডিকেট’ ঢাকাকেন্দ্রিক। ‘স্থানীয় সিন্ডিকেটও’ ঢাকার ওপর নির্ভরশীল।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভৈরবে ডিমের বার্ষিক উৎপাদন ৫ কোটি ৩৩ লাখ। এই উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি ডিম উৎপাদিত হয়। গত জুলাই মাসে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪০টি। ওই মাসে ডিম পাওয়া যায় ৪৫ লাখ ৫০০টি।
গত এক যুগের ব্যবধানে ভৈরব এখন ডিমের বড় মোকাম বা হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিম সরবরাহ হয় এ উপজেলা থেকে। ফলে ভৈরব মোকামের ডিমের দাম আশপাশের এলাকার দামের ওপরও প্রভাব ফেলে। দুই সপ্তাহ ধরে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এ বাজারেও ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত সপ্তাহে ভৈরবে এক হালি লাল ডিমের দাম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
ভৈরব পৌর শহরের চিশতিয়া ডিমের আড়তের স্বত্বাধিকারী খোকন মিয়া জানান, এ এলাকায় লাল ডিমের চাহিদা বেশি। তাই লাল ডিমের দামেরই হেরফের হয় বেশি। সেই তুলনায় দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিমের দামের খুব বেশি হেরফের হয় না।
গত বুধবার সকালে চণ্ডীবের মধ্যপাড়ার মো. ফারুকের দোকান থেকে দুটি ডিম ২৮ টাকায় কেনেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক হারু মিয়া। তিনি বলেন, ‘মাছের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে মাছবাজারে যাওয়ার সাহস নেই। মুরগির দামও বেশি। তাই ডিমই ছিল আমাদের বড় ভরসা। এখন সেই খরচও বেড়ে গেল। আগে দুপুরে চারজনের জন্য চারটি ডিম রান্না হতো। দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন অর্ধেক করে ডিম রান্না হচ্ছে।’