নগদবিহীন বা ক্যাশলেস লেনদেন বলতে নগদ অর্থের পরিবর্তে মোবাইল ওয়ালেট, ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মতো ইলেকট্রনিক উপায়গুলোকে বোঝায়। যদিও নগদবিহীন লেনদেন বিশ্বের অনেক দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এখনো এই প্রযুক্তির ব্যবহার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে এ ধরনের লেনদেনের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রযুক্তি ও আর্থিক পরিষেবার ব্যবহার বৃদ্ধি, ডিজিটাল অর্থ আদান-প্রদানকে উৎসাহিত করার সরকারি উদ্যোগ এবং ভোক্তাদের আচরণের পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক বছরে নগদবিহীন লেনদেন বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বাংলাদেশে নগদবিহীন লেনদেন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশে সাড়ে ১৬ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছে এ সেবার। এমএফএস ছাড়াও সরকার ডিজিটাল অর্থ প্রদান ব্যবস্থাকে সহজ করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) ব্যবস্থা চালু, যা বিভিন্ন অর্থ প্রদান ব্যবস্থার মধ্যে ইন্টারঅপারেবল।
ভোক্তার আচরণের পরিবর্তনও বাংলাদেশে নগদবিহীন লেনদেন বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। করোনা মহামারি ডিজিটাল লেনদেনকে ত্বরান্বিত করেছে। কারণ, গ্রাহকেরা শারীরিক যোগাযোগ এড়াতে ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতেই ডিজিটাল লেনদেনে ঝুঁকেছেন।
নগদবিহীন লেনদেন বৃদ্ধির পরও বাংলাদেশে এখনো নগদ অর্থের লেনদেনই বেশি। বিশেষ করে ছোট লেনদেনের ক্ষেত্রে। নগদবিহীন লেনদেন আরও বেশি মানুষকে আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থায় আনতে সাহায্য করতে পারে। সেটি হলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যাপ্তি যেমন বাড়বে, তেমনি দারিদ্র্য কমাতেও এ ধরনের লেনদেন সাহায্য করতে পারে।
এ ছাড়া নগদহীন লেনদেন আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে সাহায্য করে। এ ধরনের ব্যবস্থা দুর্নীতি কমাতে ও বাংলাদেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নগদবিহীন লেনদেন বাংলাদেশে ই-কমার্সের বিকাশেও অন্যতম সহায়ক। ই-কমার্সের বিকাশের মাধ্যমে নতুন ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
নগদবিহীন লেনদেন নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি কমায়। তবে এ ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনো স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে রয়েছে। ফলে তাদের পক্ষে নগদবিহীন লেনদেন পদ্ধতি ব্যবহার করা কঠিন। আবার দেশের মানুষের একটি বড় অংশ নগদবিহীন লেনদেনের সুবিধা সম্পর্কে সচেতন নয়। এ কারণে তারা লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে নগদ অর্থ ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
এদিকে নগদবিহীন লেনদেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নির্ভরযোগ্য ও দক্ষ ডিজিটাল অবকাঠামো দরকার। বাংলাদেশে বর্তমানে এই ধরনের অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। অবকাঠামোর ঘাটতি নগদবিহীন লেনদেনকে ধীরগতি ও কম নির্ভরযোগ্য করে তুলতে পারে। এ ছাড়া এ ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা একটি প্রধান উদ্বেগ। তথ্যের অপব্যবহার ও সাইবার ঝুঁকির ভয়ে দেশের অনেক লোক নগদবিহীন লেনদেনে আগ্রহ দেখায় না।
বাংলাদেশে ব্যাংকগুলো এখন অনেকাংশে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও অনলাইন ব্যাংকিং পরিষেবা বৃদ্ধির ফলে এটি হয়েছে। যন্ত্রনির্ভরতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাংকিংকে সহজ, সাশ্রয়ী হতে সাহায্য করেছে। তবে যন্ত্রনির্ভরতা এখনো বাংলাদেশে ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত জনশক্তিকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করতে পারেনি।
ব্যাংকিংয়ে যন্ত্রনির্ভরতার ফলে ডিজিটাল ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করেছে। ফলে বলা যায়, ডিজিটাল লেনদেনব্যবস্থা ব্যাংক খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রাখছে।