শুধু সিটি করপোরেশন এলাকার কমিউনিটি সেন্টারে বিয়েশাদির অনুষ্ঠান করলেই রিটার্ন দিতে হবে

কমিউনিটি সেন্টার।

আগামী এক বছরের মধ্যে যাঁরা ধুমধাম করে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের জন্য বাজেটে এক দুঃসংবাদ দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে তিনি শহর-গ্রামনির্বিশেষে সারা দেশের যেকোনো স্থানে বিয়েশাদি অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করলে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছিলেন। সে অনুযায়ী রিটার্ন জমার স্লিপ ছাড়া কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা যাবে না।

কয়েক দিনের মধ্যেই অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুটা সদয় হতে চলেছেন। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করলেই রিটার্ন জমার স্লিপ লাগবে, এমন ঘোষণা আসতে পারে অর্থ বিল পাসের সময়। অর্থাৎ সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরের কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করলে রিটার্ন জমার স্লিপ জমা দিতে হবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব পরিবর্তন করা নিয়ে এখন আয়কর বিভাগে আলোচনা চলছে।

বিয়ে ছাড়া বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন, গায়েহলুদ, সুন্নতে খতনাসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সভা, সেমিনার ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করতে কমিউনিটি সেন্টার ও মিলনায়তন ভাড়া করা হয়।

দেশে বর্তমানে ৪৩ ধরনের সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন জমার কপি জমা দিতে হয়। এই তালিকায় মিলনায়তন, হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট ভাড়া; হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিবন্ধন ও নবায়নে রিটার্ন জমার এই বাধ্যবাধকতা যুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে বাজেটে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রেও প্রস্তাব কিছুটা সংশোধন করে সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকার রেস্তোরাঁর লাইসেন্স নিবন্ধন ও নবায়নে রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা রাখা হতে পারে।

এনবিআরের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, অর্থ বিলে বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব আনা হতে পারে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক এলাকায় বিনিয়োগকারীরা বিনা শুল্কে বা শূন্য শুল্কে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারতেন। এবারের বাজেটে এসব যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর ১ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করা হয়। সেখান থেকে সরে আসছেন অর্থমন্ত্রী। আগের মতো শূন্য শুল্কে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনার সুবিধা বহাল রাখা হতে পারে।

এ ছাড়া বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশের সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেটিও সংশোধন করে আগের মতো বহাল রাখা হতে পারে।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকবে

২০২৪–২৫ অর্থবছরে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। ফলে কালোটাকার মালিকেরা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে নগদ টাকা সাদা করার সুযোগ পাবেন। একইভাবে জমি, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রেও এলাকাভেদে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব পাস হতে পারে।
শুধু ব্যক্তি করদাতাদের নয়, প্রতিষ্ঠান পর্যায়েও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিতে যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে বাজেটে, সেটিও পাস হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানির কিছু অপ্রদর্শিত আয় ও পরিসম্পদ প্রদর্শনে জটিলতা সৃষ্টি হয় বলে আলোচনা আছে। এবারের বাজেটে এমন ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে নিজেদের অপ্রদর্শিত অর্থ ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, দেশে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে, অর্থাৎ সাদা হয়েছে।

এ ছাড়া সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসছে না। অবশ্য বাজেটে শুল্ক আরোপের কোনো প্রস্তাব করা হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রী আইন সংশোধনের এই প্রস্তাব করেন। সেটি অর্থ বিলের অংশ না হওয়ায় আপাতত শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুবিধা বহাল থাকছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।