২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

নিরীক্ষা ছাড়া রিটার্ন নয়

কোম্পানির আয়কর রিটার্নে আইসিএবির হিসাববিদদের তৈরি করা নিরীক্ষা প্রতিবেদন ছাড়া চলবে না।

  • প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কোম্পানি তাদের আয়কর বিবরণীর সঙ্গে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়।

  • আইসিএবি বলছে, তাদের নিবন্ধিত হিসাববিদেরা বছরে ১৫-১৬ হাজার নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেন।

নিরীক্ষা ছাড়া কোনো কোম্পানির রিটার্ন নেবে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বার্ষিক আয়কর বিবরণীর সঙ্গে সঠিক নিরীক্ষা বিবরণী না দিলে রিটার্ন গ্রহণযোগ্য হবে না। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানি করদাতা প্রতিষ্ঠান বার্ষিক আয়কর বিবরণীর সঙ্গে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের মাধ্যমে তৈরি করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনও জমা দিতে হবে।

সেই প্রতিবেদন সঠিক কি না, তা দেখতে কর কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। চলতি ডিসেম্বর মাস থেকে তা কার্যকর করা হয়েছে। এখন থেকে কোম্পানির রিটার্নের হিসাব-নিকাশের নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই করে ‘সবুজ সংকেত’ দেবেন কর কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি এনবিআর কোম্পানি করদাতা কর্তৃক হিসাব বিবরণী হিসাববিদদের মাধ্যমে সত্যায়িত কি না, তা বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে। এই কর কর্মকর্তাদের একটি নির্দেশিকা দিয়েছে এনবিআর। অবশ্য এর আগে এনবিআরকে প্রস্তুতিও নিতে হয়েছে।

কোন নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি সঠিক, আর কোনটি সঠিক নয়, তা এত দিন বুঝতে পারতেন না এনবিআরের কর কর্মকর্তারা। সম্প্রতি হিসাববিদদের প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) নিজেদের একটি অনলাইন সিস্টেম তৈরি করেছে। সেখানে হিসাববিদেরা যত নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করবেন, তা জমা দিতে হবে। সেখানে জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি বিশেষ কোড নম্বর বা ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কোড (ডিভিসি) থাকবে, যা আয়কর বিবরণীতে লিখতে হবে। কর কর্মকর্তারা সেই ডিভিএস দেখে সরাসরি আইসিএবির সিস্টেম প্রবেশ করে তা যাচাইবাছাই করতে পারবেন। গত ১২ নভেম্বর এ নিয়ে এনবিআর ও আইসিএবির মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।

সরকারের উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। কারণ, নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মাধ্যমেই কর নির্ধারিত হয়। আইসিএবির সিস্টেমের মাধ্যমে যাচাইবাছাই করা হলে কোনটি প্রকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদন, তা জানা যাবে।
আবুল কাসেম খান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও এ কে খান গ্রুপের পরিচালক

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কী কী থাকতে হবে, তা নিয়ে এনবিআর কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। প্রথমত, নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতে হিসাববিদ ছাড়াও পরিচালকদের স্বাক্ষর থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, আইসিএবির দেওয়া ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কোড থাকতে হবে। আইসিএবির ওয়েবসাইট থেকে কর কর্মকর্তা যাচাইবাছাই শেষে যদি দেখতে পান যে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কোড মিলছে না কিংবা কোম্পানির পরিচালকদের স্বাক্ষর নেই, তাহলে কর কমিশনার সঙ্গে সঙ্গে ওই হিসাব বিবরণীটি বাতিল করে দেবেন। এর পাশাপাশি আয়কর অধ্যাদেশের ৩৫ ধারা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও এ কে খান গ্রুপের পরিচালক আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। কারণ, নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মাধ্যমেই কর নির্ধারিত হয়। আইসিএবির সিস্টেমের মাধ্যমে যাচাইবাছাই করা হলে কোনটি প্রকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদন, তা জানা যাবে।

তবে সবার জন্য নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। শুধু কোম্পানি আইনে গঠিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানেরই আয়কর বিবরণীর সঙ্গে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। তবে অংশীদারির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থাসহ (এনজিও) কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমার সময় নিরীক্ষা প্রতিবেদন পায়।

এনবিআরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, নিরীক্ষার বিবরণী দিয়ে কর ঠিক হয়। তাই নিরীক্ষা প্রতিবেদন সঠিক হলে সরকার প্রকৃত রাজস্ব পাবে। এত দিন অনেক কোম্পানি ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছে। এখন তা বন্ধ হয়ে যাবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কোম্পানি তাদের আয়কর বিবরণীর সঙ্গে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়। অন্যদিকে আইসিএবি বলছে, তাদের নিবন্ধিত হিসাববিদেরা বছরে গড়ে ১৫-১৬ হাজার নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেন। এর মানে, বাকি ২০ থেকে ২৫ হাজার নিরীক্ষা প্রতিবেদন ভুয়া। এখন এসব প্রতিষ্ঠান আইসিএবির সদস্যদের মাধ্যমে নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি না করলে এনবিআরের কর্মকর্তারা তা গ্রহণ করবেন না। কিংবা ওই সব প্রতিষ্ঠান ভুয়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিলে তা ধরা পড়বে।

আবুল কাসেম খান আরও বলেন, বড় কোম্পানির হিসাববিদদের মাধ্যমে নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির মতো সক্ষমতা আছে। কিন্তু অনেক ছোট ও মাঝারি কোম্পানির সেই সক্ষমতা নেই। তাদের যেন হয়রানি না করা হয়। হয়রানি করলে এসব কোম্পানির মালিকেরা ‘দুই নম্বরী’ পথ বেছে নেবেন। তাঁরা যাতে সঠিকভাবে নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিতে পারেন, সে জন্য সহায়তা করতে হবে।