কম খরচে টাকা পাঠাতে বেছে নিন ডাকঘর
ব্যাংকের পাশাপাশি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসও (এমএফএস) এখন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে টাকা পাঠানোর একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়, ওকে, মাই ক্যাশ ও এন ক্যাশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই সেবা দিচ্ছে। ফলে যে কেউ যেকোনো সময় দেশের যেকোনো প্রান্তে টাকা পাঠাতে পারেন। অবশ্য এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে একেকটির খরচের হার একেক রকম।
তবে দেশে সবচেয়ে কম খরচে টাকা পাঠানোর সেবাটি দিচ্ছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। তাদের সেবাটির নাম ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (ইএমটিএস)। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয় বলে এটাকে মোবাইল মানি অর্ডার সার্ভিসও বলা হয়। দেশে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠানোর যে উপায়গুলো রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে কম খরচ পড়ে এই ইএমটিএসের মাধ্যমে। এতে মোট খরচ হয় ২৫০ টাকা।
ইএমটিএসের মাধ্যমেও মুহূর্তের মধ্যেই দেশের যেকোনো প্রান্তে টাকা পাঠানো যায়। গ্রাহকের ঠিকানা যা-ই হোক না কেন, তিনি দেশের যেকোনো ডাকঘর থেকে টাকা পাঠাতে পারবেন, আবার তুলতেও পারবেন। কমিশন বা খরচ প্রতি হাজারে পাঁচ টাকা। তবে ব্যতিক্রম শুধু এক হাজার টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে। এক হাজার টাকা পাঠানোর খরচ ১০ টাকা। পরে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি হাজারে খরচ ৫ টাকা।
টাকা পাঠানোর পর প্রেরকের (যিনি পাঠান) মুঠোফোনে একটি পিন নম্বর যায়, যা প্রেরক ছাড়া আর কেউ জানতে পারেন না। পরে প্রেরক একটি পেইড মেসেজ পান, যার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারেন টাকা পৌঁছেছে। ২০১০ সালের ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী ইএমটিএসের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন, যা চালু হয় একই বছরের ৫ মে।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগে ২ হাজার ৭৫০টি পোস্ট অফিসে এই সেবা চালু রয়েছে। দেশের সব জিপিও, জেলা শহরে অবস্থিত সব ডাকঘর, সব উপজেলা ডাকঘর, সাব-পোস্ট অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ পোস্ট অফিসগুলোতে এই সেবা পাওয়া যায়। অর্থাৎ, কিছু পার্বত্য এলাকা ছাড়া সারা দেশই এই সেবার আওতায় রয়েছে।
দুস্থ, বয়স্ক, রোহিঙ্গা ও ভাতা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের সুযোগ রয়েছে ইএমটিএসের মাধ্যমে। ডাক বিভাগ বলছে, দেশের বাইরে বিভিন্ন মিশনে কর্মরত সব সেনাসদস্যের বেতন-ভাতা ইএমটিএসের মাধ্যমে তাঁদের পরিবার-পরিজনের কাছে সফলভাবে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফিও ইএমটিএসের মাধ্যমে আদায় করা হয়।
ডাক বিভাগের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে গ্রাহকেরা ইএমটিএসের মাধ্যমে সাড়ে ৪ কোটি টাকা পাঠিয়েছিলেন, যা পরের ২০১০-১১ অর্থবছরে বেড়ে হয় ৭১২ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি টাকা পাঠান গ্রাহকেরা। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা কমে ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকায় নেমে আসে। পরের অর্থবছরগুলোতে এই লেনদেন কমতে থাকে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা মাত্র ১১৮ কোটি টাকায় নেমে যায়।
মূলত বেসরকারি মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে বেশি সক্রিয় থাকায় এবং ডাক বিভাগ টাকা পাঠানোর খরচ সময়মতো কমানোর সিদ্ধান্ত না নিতে পারায় ইএমটিএসের বাজার অনেকটাই হাতছাড়া হয়। ২০১৮ সালে তারা যেন হুঁশ ফিরে পায় এবং খরচ (কমিশন) ৭৩ শতাংশ কমায়, যা এখন চলছে।
ডাক অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ইএমটিএসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর খরচ এ রকম ৩ হাজার টাকার বিপরীতে ১৫ টাকা, ৫ হাজার টাকায় ২৫ টাকা, ৭ হাজারে ৩৫ টাকা, ১০ হাজারে ৫০ টাকা, ১৫ হাজারে ৭৫ টাকা, ২০ হাজারে ১০০ টাকা এবং এভাবে ৫০ হাজারে ২৫০ টাকা।
খরচ কমের সুবিধা ভোগ করতে গেলে একটুখানি অসুবিধাও অবশ্য মেনে নিতে হবে। যেমন বিকেল পাঁচটার পর টাকা জমা কিংবা উত্তোলন করা যায় না। আবার শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বন্ধ থাকে ডাকঘর। এই সমস্যা দূর করতে ডাক অধিদপ্তর বাংলালিংকের সঙ্গে চুক্তি করলেও পরে আর কাজটি এগোয়নি।
জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি এমএফএসগুলোর দাপটে ইএমটিএস সেবাটি মার খেয়েছে। মানুষ এখনো কম খরচের সেবাটি গ্রহণ করতে পারেন। করলে তাঁদেরই লাভ হবে। এই সেবার মাধ্যমে মানুষের প্রতারিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ‘পুরো ডাক বিভাগকে ডিজিটাল সেবার আওতায় আনার কাজ চলছে, যার মধ্যে ইএমটিএস সেবাটিও রয়েছে। সেবাটি আবার পূর্ণোদ্যমে ফিরে আসবে বলে আমরা আস্থা রাখি।’