এক মাসে ২০ হাজার করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দিতে চান
নিবন্ধন নিতে যা লাগবে—ইটিআইএন, মুঠোফোন নম্বর।
কর নেই এমন করদাতারা কয়েক ক্লিকেই রিটার্ন দিতে পারবেন।
বিকাশেও করের টাকা পরিশোধ করা যাবে।
এ বছর থেকেই আপনি ঘরে বসেই বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রথমে নিবন্ধন নিতে হবে। পরে ই-রিটার্ন জমা দিতে হবে। গত এক মাসে ২০ হাজার করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন নিয়েছেন। আর পাঁচ হাজারের মতো করদাতা রীতিমতো ই-রিটার্ন জমা দিয়ে ফেলেছেন। ই-রিটার্ন দিয়ে বিকাশে করের টাকা পরিশোধ করা যায়।
এনবিআর ১০ অক্টোবর ই-রিটার্নের ব্যবস্থা চালু করেছে। ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো www.etaxnbr.gov.bd। প্রতিবছর জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আয়কর বিবরণী জমা দেওয়া যায়। অনলাইনে বার্ষিক রিটার্ন দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করার পর প্রথম দুই সপ্তাহে মাত্র ১ হাজার করদাতা রিটার্ন দেন। তবে পরের দুই সপ্তাহে ৪ হাজার করদাতা রিটার্ন দেন।
ই-রিটার্নের ব্যবস্থা চালুর সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত এনবিআরের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যে ৮০ শতাংশ করদাতা ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। আমরা প্রতিনিয়ত সিস্টেমটি হালনাগাদ করছি। নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সিস্টেম তৈরি হয়ে যাবে।’
যেভাবে নিবন্ধন করবেন
ই-রিটার্ন দিতে চাইলে প্রথমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন অপশনে গেলে প্রথমে আপনাকে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) দিতে হবে। এরপর নিজের নামে নিবন্ধিত মুঠোফোন নম্বর দিতে হবে আপনাকে। পরে ক্যাপচা লিখে সত্যতা যাচাই করতে হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন নম্বর, মোবাইল ফোনের তথ্য যাচাই করে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় আপনি নিজের জন্য একটি পাসওয়ার্ড দেবেন। এভাবে হয়ে যাবে আপনার ই-রিটার্ন নিবন্ধন।
সবার জন্য সহজ
টিআইএন আছে, কিন্তু করযোগ্য আয় নেই। ঝক্কিঝামেলার কারণে রিটার্ন দেন না। অথচ সব টিআইএনধারীর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। এমন করদাতাদের জন্য সুখবর নিয়ে এল ই-রিটার্নের ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় করদাতারা টিআইএন নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সিস্টেমে ঢুকে কয়েকটি ক্লিকেই রিটার্ন দিতে পারবেন। সিস্টেম থেকেই জিজ্ঞাসা করা হবে, করযোগ্য আয় আছে কি না। এ ছাড়া বাড়ি-গাড়ি আছে কি না, কিংবা ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ আছে কি না। এসবের উত্তর যদি ‘না’ হয় তাহলে এনবিআরের ওই সিস্টেমই আপনার রিটার্ন তৈরি করে দেখাবে। আপনি শুধু তা চেক করে সাবমিট করবেন।
যাদের করের পরিমাণ কম, ১০-২০ হাজার টাকা; তাঁরা বিকাশে কর দিতে পারবেন। এনবিআরের হিসাব বলছে, এমন করদাতার সংখ্যা ১০-১৫ লাখ, যাঁরা অনলাইনে ই-রিটার্ন দেওয়ার সময় বিকাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। এনবিআরের ওই সিস্টেমে কোন প্রক্রিয়ায় কর পরিশোধ করতে চান, তা জানতে চাইবে। সেখানে বিকাশ অপশন আছে।
অনেক করদাতার উৎসে কর কেটে রাখা হয়। যেমন সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকা তোলার সময় উৎসে কর বাবদ ১০ শতাংশ কেটে রাখা হয়। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকার কম হলে ৫ শতাংশ কর কেটে রাখা হয়। এমন করদাতারা ই-রিটার্ন দিলে সঞ্চয়পত্রের টাকাও সমন্বয় করতে পারবেন। আগামী সপ্তাহ থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানতের ওপর সুদের ওপর উৎসে কর এবং গাড়ির অগ্রিম করের টাকাও সমন্বয়ের সুযোগ রাখা হবে বলে জানা গেছে।
এ সম্পর্কে এনবিআরের আয়কর বিভাগের সাবেক সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। করদাতারা কর কার্যালয়ে গেলে হয়রানির শিকার হন। অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া গেলে তাঁদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হবে না। করদাতারা নির্বিঘ্নে কর দিতে পারবেন।
গত বছরের নভেম্বর মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ই-রিটার্ন সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়। এ নিয়ে সংস্থাটির একটি দল ১১ মাস ধরে কাজ করেছে। তারা এই সিস্টেম তৈরি করে গত অক্টোবর মাসে চালু করে। এখন কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তা ওই দলই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।