সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি যখন কমছে এবং গ্রাহকেরা যখন নতুন বিনিয়োগের পরিবর্তে সঞ্চয়পত্র ভাঙাচ্ছেন বেশি, ঠিক তখন সঞ্চয়পত্র খাতকে আরও স্বচ্ছ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য জোরদার করা হচ্ছে এ খাতে অনলাইন অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ব্যবস্থা।
সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে গ্রাহকের মোবাইল নম্বরের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারের সংযুক্তি আছে। কিন্তু গ্রাহকের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত নেই। তাই প্রকৃত গ্রাহকই যাতে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন, সে জন্য সরকারের টিআইএন সার্ভারের সঙ্গে সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের টিআইএন মিলিয়ে দেখার কথা ভাবা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ বিভাগের ‘সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা’ নামের একটি কর্মসূচি রয়েছে। সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় অর্থ বিভাগের এ কর্মসূচিটির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। কর্মসূচিটির মেয়াদ আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি টাকার। অথচ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির চিত্র নেতিবাচক। এ সময়ে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ তো হয়ইনি; বরং ৬৩২ কোটি টাকা কম বিনিয়োগ হয়েছে।
অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে গত রোববার অনুষ্ঠিত নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিডিএমসি) বৈঠকে সঞ্চয়পত্র খাতে অধিকতর স্বচ্ছতা আনা এবং সাম্প্রতিক সময়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়।
সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকেরা বলছেন, অর্থ বিভাগ স্বচ্ছতা বৃদ্ধির নামে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে আরও নিরুৎসাহিত করতে চাইছে কি না, তা–ও চিন্তায় আসে। উদ্যোগগুলো সময়োচিত হয়নি বলে মনে করেন সাইফুল ইসলাম নামের একজন ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের গ্রাহক।
সূত্রগুলো জানায়, সঞ্চয়পত্র কেনাবেচার পদ্ধতি এখনো পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার আওতায় আসেনি। ফলে সরকারের সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থার (আইবাস++) সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের হিসাবও এখন পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারছে না সরকার। এ কারণে প্রতি মাসে যথাসময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হিসাব অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে।
বর্তমানে যাঁরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের এনআইডির ফটোকপি ও ই-টিআইএনও জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে টিআইএনের বিষয়টি পুরোপুরি মানা হচ্ছে না বলে অর্থ বিভাগের কাছে ধরা পড়েছে।
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেউ সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেললে, মুঠোফোন নম্বর ও নমিনির পরিবর্তন হলে সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের তথ্য জালিয়াতির আশঙ্কা তৈরি হয়। এ জালিয়াতি রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে একবার ব্যবহারযোগ্য পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পদ্ধতির উন্নয়ন চায় অর্থ বিভাগ। বর্তমান ওটিপি পদ্ধতিতে কিছু জটিলতা রয়ে গেছে। এ ছাড়া ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের কোনো গ্রাহক মারা গেলে নগদ টাকা পাওয়া পর্যন্ত অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়।
অর্থ বিভাগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন ধীরে ধীরে হবে। তবে কাজগুলো হবে অর্থ বিভাগের চলমান কর্মসূচির আওতায়। তাই কর্মসূচিটির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে সাময়িকভাবে একটু ধাক্কা লাগলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা পুরো খাতের জন্য ইতিবাচক হবে।