প্রাইজবন্ডে গড়ে তুলতে পারেন সঞ্চয়ের ভিত
সঞ্চয়ের কথা এলেই যে কারও মনে প্রথমেই হয়তো আসে সঞ্চয়পত্রের কথা। কেউ হয়তো ব্যাংকে মাসে মাসে সঞ্চয়ের কথাও ভাবেন, যেটি ডিপিএস নামে বেশি পরিচিত।
সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকের ডিপিএস, যেটিই হোক—এ দুই সঞ্চয়ের জন্য মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ লাগে। প্রচলিত সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে লাগে লাখ টাকা। আর ব্যাংকে ডিপিএস করতে হলে মাসে ন্যূনতম ৫০০ টাকা লাগে। তবে এর কমে যাঁরা সঞ্চয় করতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য তাহলে সঞ্চয়ের ব্যবস্থা কী? প্রশ্নটি জাগতেই পারে যে কারও মনে। মাসে যাঁরা ১০০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকা, অর্থাৎ সামর্থ্য অনুযায়ী একেক মাসে একেক পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে চান, তাঁরা কী করবেন। তাঁদের জন্য সঞ্চয়ের বিকল্প হতে পারে প্রাইজবন্ড।
প্রাইজবন্ডের কথা নিশ্চয়ই জানেন সবাই। কিন্তু এটিও যে আপনার জন্য সঞ্চয়ের বড় একটি খাত হতে পারে, তা হয়তো ভাবেননি। যদি আপনি মাসে মাসে সামর্থ্য অনুযায়ী যখন যা পারেন, তা সঞ্চয় করতে চান, তাহলে প্রাইজবন্ড হতে পারে আপনার জন্য ভালো বিকল্প। বর্তমানে দেশে যে প্রাইজবন্ড আছে, তার প্রতিটির সর্বনিম্ন মূল্যমান মাত্র ১০০ টাকা। তাই আপনি আপনার ইচ্ছেমতো প্রাইজবন্ড কিনতে পারবেন মাসে মাসে।
এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই। যে মাসে হাতে টাকা থাকবে, সে মাসে কিনলেন। পরের মাসে কিনতে না পারলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে ব্যাংকে ডিপিএস করলে বা সঞ্চয়পত্র কিনলে মাসে মাসে সুদ বা মুনাফা পাবেন। কিন্তু প্রাইজবন্ডের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা নেই। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে প্রাইজবন্ড কিনেও পেতে পারেন লাখ টাকা পুরস্কার। সে ক্ষেত্রে মাত্র ১০০ টাকার একটি প্রাইজবন্ড আপনাকে বানিয়ে দেবে লাখপতি।
বছরে কয়বার ড্র হয়, কত টাকা পুরস্কার
তিন মাস অন্তর প্রাইজবন্ডের লটারির ড্র হয়। আপনার কেনা কোনো প্রাইজবন্ড যদি সেই লটারি জিতে যায়, আর সেটি যদি হয় প্রথম পুরস্কার, তাহলে তো আর কথায় নেই।
প্রথম পুরস্কার হিসেবে পাবেন ৬ লাখ টাকা (১টি)। আর দ্বিতীয় পুরস্কারের অর্থমূল্য ৩ লাখ ২৫ হাজার (১টি), তৃতীয় পুরস্কার ১ লাখ টাকা (২টি), চতুর্থ পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা (২টি) এবং সর্বনিম্ন পুরস্কার ১০ হাজার টাকা (৪০টি)। প্রতি মাসে প্রাইজবন্ডে মোট ৪৬টি পুরস্কার রয়েছে। শুধু একটি সিরিজের জন্যই ৪৬টি পুরস্কার। এমন আরও ৭০টি সিরিজ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রাইজবন্ডে মোট পুরস্কারের সংখ্যা ৩ হাজার ২২০টি। বছরের ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই, ৩১ অক্টোবর প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রাইজবন্ডের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, একজন গ্রাহক প্রাইজবন্ড কেনার পরপরই পুরস্কারের আওতায় আসবেন না। প্রাইজবন্ড কেনার ন্যূনতম দুই মাস অতিক্রমের পর ওই বন্ড লটারির ড্রয়ের আওতায় আসবে। ধরা যাক, আপনি ২৫ জানুয়ারি প্রাইজবন্ড কিনেছেন। তাহলে ৩১ জানুয়ারি যে ড্র অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে আপনার কেনা প্রাইজবন্ডটি লটারির ড্রয়ের জন্য বিবেচিত হবে না। জানুয়ারির পর ৩০ এপ্রিল যে ড্র হবে, সেখানে সেটি বিবেচনায় আসবে।
কিনবেন কোথা থেকে
আপনার আশপাশের যেকোনো ব্যাংক বা ডাকঘর থেকে প্রাইজবন্ড কিনতে পারবেন। তবে বেসরকারি ব্যাংকের সব শাখায় হয়তো প্রাইজবন্ড না–ও পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রমালিকানাধীন যেকোনো ব্যাংকে যেতে পারেন। যদি আপনি শহরের বাসিন্দা হন, তাহলে নাহয় ব্যাংক থেকে কিনলেন। যদি গ্রামে থাকেন, আর আপনার এলাকার আশপাশে কোনো ব্যাংক না থাকে, তাহলে কী করবেন? সে ক্ষেত্রে আপনার বাড়ির পাশের ডাকঘরে যেতে পারেন। যদি কোনো কারণে ওই ডাকঘরে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাইজবন্ড না পান, তাহলে তাদের আপনার চাহিদার কথা বলুন। তারা জোগাড় করে দেবে। একটা সময় দেশে বিয়েশাদি ও সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে প্রাইজবন্ডের ব্যাপক ব্যবহার ছিল। এখন সেভাবে না থাকলেও একেবারে যে এই চল উঠে গেছে তা নয়। কালেভদ্রে এখনো উপহার হিসেবে প্রাইজবন্ডের দেখা মেলে।
পুরস্কারে আছে কর
প্রাইজবন্ডের পুরস্কার কিন্তু করমুক্ত নয়। লটারিতে বিজয়ীর পুরস্কার মূল্য থেকে ২০ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখা হয়। আপনি যদি প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা বিজয়ী হন, তাহলে প্রতি লাখে উৎসে কর বাবদ ২০ হাজার টাকা কেটে রাখা হবে। সে ক্ষেত্রে পুরস্কারের ৬ লাখ টাকার বিপরীতে আপনি হাতে পাবেন ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ফেরত পাবেন ১০০ টাকার প্রাইজবন্ডের মূল্যও। তবে পুরস্কারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে পুরস্কারের অর্থ দাবি করতে হবে। অন্যথায় পুরস্কারটি বাতিল হয়ে যাবে।
তবে পুরস্কার না জিতলেও আপনার ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই। আপনি চাইলে যেকোনো সময় আপনার হাতে থাকা প্রাইজবন্ড ভাঙিয়ে সমপরিমাণ অর্থ নগদায়ন করে নিতে পারবেন। তাই সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে প্রাইজবন্ড হতে পারে আপনার অন্যতম পছন্দ। যখনই হাতে টাকা আসবে, তখনই কিনতে পারবেন এটি, যত খুশি তত। তাতেই দেখবেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনার জন্য সঞ্চয়ের একটি ভিত দাঁড়িয়ে যাবে।
[তথ্যসূত্র: জসীম উদ্দিন রাসেলের লেখা বই স্মার্ট মানি হ্যাকস]