শুল্ক কমানোর পরও নিত্যপণ্যের আমদানি কম

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকার সম্প্রতি আমদানি পর্যায়ে চিনি, সয়াবিন তেল, পাম তেল ও ডিমের শুল্কহার কমিয়েছে। তবে নতুন শুল্কহারে এখনো খুব বেশি পণ্য আমদানি হয়নি। এ কারণে বাজারে এসব পণ্যের দামে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, শুল্কহার কমানোর পর বাজারে চিনি, সয়াবিন তেল, পাম তেলের দাম কেজিপ্রতি এক থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে ডিমের দাম কমেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, শুল্কহার কমানোর পর গত শনিবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টন পণ্য খালাস হয়েছে, যার বেশির ভাগই পাম তেল। অপরিশোধিত চিনির কোনো চালান খালাস হয়নি। সয়াবিন তেলের চালানও খালাস হয়নি। এ সময়ের মধ্যে ডিমের একটি চালান খালাস হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, শুল্কহার কমানোর পর এ সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তিন জাহাজ চিনি ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। এসব জাহাজের পণ্য খালাসের পর বাজারজাত হলে শুল্কহার কমানোর সুবিধা পাওয়া যাবে।

চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৮ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এরপর ১৭ অক্টোবর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে কাস্টমস শুল্ক ছয় হাজার থেকে কমিয়ে সাড়ে চার হাজার টাকা করা হয়েছে।

শুল্ক–কর কমানোর কারণে সাময়িক সুবিধা মিলবে। তবে বিশ্ববাজারে যদি মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, তাহলে সরকারকে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, এই পণ্য আমদানিনির্ভর। বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভর করে পণ্যটির দাম কত হবে।
শফিউল আতহার, পরিচালক, টি কে গ্রুপ

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন শুল্কহারে শনিবার পর্যন্ত অপরিশোধিত চিনির কোনো চালান খালাস হয়নি। তবে পরিশোধিত চিনির ১৭০ টনের একটি চালান খালাস হয়েছে। খাদ্যপণ্য শিল্পে ব্যবহারের জন্য চালানটি আমদানি হয়েছে। দেশে মূলত অপরিশোধিত চিনি পরিশোধন করে বাজারজাত করা হয়।

বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দুই জাহাজে ১ লাখ ২০ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। এই চিনি আমদানি করেছে মেঘনা গ্রুপ ও সিটি গ্রুপ। দু-এক দিনের মধ্যে এসব চিনি খালাস শুরু হবে। তাতে কম শুল্কহারে চিনি বাজারজাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

চিনির মতো ভোজ্যতেল পাম ও সয়াবিনের শুল্কহারও কমানো হয়েছে। ১৭ অক্টোবর পাম ও সয়াবিন তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা কার্যকর থাকবে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, শুল্কহার কমানোর পর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সিটি গ্রুপের সয়াবিন তেলের একটি চালান খালাস হয়েছে। চালানটিতে প্রতি কেজিতে শুল্ককর পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ১২ টাকা। শুল্ক কমানোর আগে তা ছিল কেজিপ্রতি ১৮ টাকা; অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ছয় টাকা কমেছে শুল্ক–কর। চালানটি এখনো বাজারজাত করা হয়নি। বন্দর থেকে খালাস করে ট্যাংক টার্মিনালে রাখা হয়েছে। এরপরই তা পরিশোধন করে বাজারজাত করা হবে।

শুল্ক কমানোর পর সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে পাম তেল। পাম তেলের ৬৯ হাজার টনের চালান খালাস হয়েছে। নতুন শুল্কহারে প্রতি কেজিতে শুল্ক–কর পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ১২-১৩ টাকা। আগে প্রতি কেজিতে শুল্ক–কর দিতে হতো ১৭-১৮ টাকা।

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে থাকায় ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে দাম সমন্বয় করার অনুরোধ জানায়। তবে সরকার ভোজ্যতেলের দাম না বাড়িয়ে শুল্কহার কমিয়ে দেয়।

জানতে চাইলে টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার প্রথম আলোকে বলেন, সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বিশ্ববাজারে বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে শুল্ক–কর কমানোর কারণে সাময়িক সুবিধা মিলবে। তবে বিশ্ববাজারে যদি মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, তাহলে সরকারকে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, এই পণ্য আমদানিনির্ভর। বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভর করে পণ্যটির দাম কত হবে।

ডিমের বাজার সহনীয় রাখতে ১৭ অক্টোবর ডিম আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে বলে এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

এনবিআরের হিসাবে, শুল্কহার কমানোর পর এখন পর্যন্ত ডিমের মাত্র একটি চালান আমদানি হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২ লাখ ৩১ হাজার পিসের এ চালান আমদানি করেছে ঢাকার হাইড্রো লেন সলিউশন। পুরোনো শুল্কহারে প্রতিটি ডিমে শুল্ক–কর ছিল প্রায় দুই টাকা। শুল্ক কমানোর পর তা কমে ৬৮ পয়সায় নেমেছে; অর্থাৎ প্রতিটি ডিমে দেড় টাকার কাছাকাছি শুল্ক–কর কমেছে।

আমদানি কম হলেও বাজারে ডিমের দাম কমেছে। প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়ে হয়েছিল ১৭৫-১৮০ টাকা। এখন তা কমে ১৪৫ টাকায় নেমেছে।