সাময়িক ফল দিতে পারে

নয়টি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে একজন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে।

মোস্তাফিজুর রহমান

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপটিকে আমি নেতিবাচকভাবে দেখতে চাই না। বিশ্বের অনেক দেশেই পণ্যের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) লেখা থাকে। আমাদের দেশে এ ব্যাপারে ঘাটতি রয়েছে।

এটা এক অদ্ভুত বিষয় যে আমদানি করা পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও আমাদের দেশে উল্টো বেড়ে যায় বা আন্তর্জাতিক বাজারে যতটুকু বাড়ে, আমাদের দেশে বেড়ে যায় তার চেয়ে অনেক বেশি।

আসলে এখানে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনাটা গড়ে ওঠেনি এখনো। ফলে সিন্ডিকেট (আঁতাত করে দাম বাড়ানোর জোট) গড়ে উঠতে পারে সহজেই। সিন্ডিকেট চাইলে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে। অতীতে বহুবার এমন দেখা গেছে।

তবে বিষয়টিতে সরকারের আরও মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর দায়িত্ব রয়েছে। আমার মতে, সমন্বিতভাবে যথাযথ বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। ভালো দিক যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অন্তত স্বীকার করছে যে এখানে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর বৈঠকের সিদ্ধান্ত যেটুকু শুনলাম, তাতে মনে হচ্ছে কাজটি বাস্তবায়িত হলে সাময়িক ফল দিতে পারে।

এটা একপ্রকার সমঝোতাভিত্তিক দাম নির্ধারণ হতে যাচ্ছে। তবে ভোক্তার স্বার্থের দিক বিবেচনা করলে সরকারের উচিত হবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পথ বের করা। নইলে তা কাজে দেবে না। কারণ, সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী সব সময় সুযোগ খুঁজবে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেবে, কোনো ব্যবসায়ী হয়তো বলবেন তাঁর পণ্য আগে অনেক বেশি দাম কেনা এবং এখন তিনি কমে বিক্রি করবেন না। তাঁর যুক্তিও ফেলা দেওয়া যাবে না।

মানুষ এখন মূল্যস্ফীতির চাপে। এ অবস্থায় উদ্যোগটিকে আমি সরকারের স্বল্পকালীন চেষ্টা হিসেবে দেখছি। পাশাপাশি চাইছি বড় উদ্যোগের পথে সরকার হাঁটুক। ভোক্তাদের বরাবরই অভিযোগ যে ব্যবসায়ীরা তাঁদের গলা কাটছেন।

আরও পড়ুন

সরকারের উচিত হচ্ছে গলা কাটার পথ বন্ধ করার ব্যবস্থা করা এবং সারা দেশে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা। মনে হতে পারে যে এমএস রড ও সিমেন্ট নিত্যপণ্যের মধ্যে পড়ে কি না।

আমার বক্তব্য হচ্ছে, নির্মাণসামগ্রী হলেও এগুলো এখন জরুরি পণ্য। সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রেখে এগুলোর দাম নির্ধারণ করার কাজটি সরকার কতটা পারবে, সেটা একটা বিষয়। তবে উদ্যোগটি বা উদ্যোগের চেতনাটিকে আমি স্বাগত জানাই।

মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)