উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি চাঙা, প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন বছর পর

উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। টানা তিন বছর ধরে সংকুচিত হওয়ার পর ২০২৩ সালে দেশটির অর্থনীতিতে জোরালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, কোভিড–১৯ মহামারির কারণে বন্ধ করা সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর চীনের সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য বাড়ার ফলে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিতে চাঙাভাব দেখা যাচ্ছে।

ব্যাংক অব কোরিয়া জানিয়েছে, ২০২৩ সালে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। শতাংশের হিসাবে ২০১৬ সালের পর এটি হবে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি। উত্তর কোরিয়া আনুষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করে না। সে কারণে ব্যাংক অব কোরিয়ার তথ্যকেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করা হয়।

রয়টার্স জানায়, বিশ্বের যেসব দেশ গোপনীয়তা বজায় রেখে চলে, তার মধ্যে উত্তর কোরিয়া অন্যতম। সে কারণে দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। ব্যাংক অব কোরিয়ার এক কর্মকর্তা বলেন, উত্তর কোরিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কোভিড–সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও ভালো আবহাওয়ার কারণে দেশটির অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর পাশাপাশি কোভিডের বিধিনিষেধের কারণে অর্থনীতি ২০২২ সালে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, ২০২১ সালে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ও ২০২০ সালে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়।

মহামারির সময়ে অনেক মানবাধিকার গোষ্ঠী আশঙ্কা প্রকাশ করে যে উত্তর কোরিয়ার বিপুলসংখ্যক মানুষ খাদ্যঘাটতিতে পড়েছেন। গত জানুয়ারিতে দেশটির নেতা কিম জং–উন বলেন, খাদ্যের মতো মৌলিক পণ্য মানুষকে দিতে ব্যর্থ হওয়া একটি ‘গুরুতর রাজনৈতিক ইস্যু’।

ব্যাংক অব কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা বলেন, বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে ২০২৩ সালের অর্থনীতির এই চাঙাভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তবে একই সঙ্গে ইতিবাচক কিছু দিকও আছে, যেমন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা এবং রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।

গত মাসে পিয়ংইয়ং ও মস্কো বাণিজ্য, অর্থনীতি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়াতে একমত হয়। এ সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উত্তর কোরিয়া সফর করেন, যা ছিল ২০০০ সালের পর তাঁর প্রথম পিয়ংইয়ং সফর। ওই সফরের সময় দুই দেশ একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিও স্বাক্ষর করে।

ব্যাংক অব কোরিয়ার হিসাবে, ২০২৩ সালে উত্তর কোরিয়া যত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করেছে, তার ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ করছে চীনের সঙ্গে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উত্তর কোরিয়ার শিল্প খাত গত বছর ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ধাতব পদার্থ ও পরচুলার উৎপাদন বাড়ার ফলে শিল্পে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আবাসন প্রকল্প বাড়ার কারণে নির্মাণশিল্পের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০০২ সালের পর সর্বোচ্চ। কৃষিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ শতাংশ।

উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিতে ২০২৩ সালে শিল্পের অবদান ছিল ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে কৃষি ও নির্মাণ খাতের অবদান ছিল যথাক্রমে ২২ শতাংশ ও ১১ শতাংশ। জুতা, হ্যাট, পরচুলাসহ বিভিন্ন পণ্য বিদেশে পাঠিয়ে রপ্তানি খাতে দেশটি ২০২৩ সালে ১০৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আর বিদেশ থেকে সার কেনার কারণে আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭১ শতাংশ।

২০২৩ সালে উত্তর কোরিয়ার মাথাপিছু আয় ছিল ১৫ লাখ ৯০ হাজার ওন বা দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রার সমপরিমাণ। এই অর্থ ১ হাজার ১৪৭ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। বিপরীতে দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয় ৪ কোটি ৭২ লাখ ওন। অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ার মাথাপিছু আয় দক্ষিণের মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশের সমান।