দাম ধরে রাখলে সংকট কাটবে না

আহসান এইচ মনসুর

বাংলাদেশ ব্যাংক এ রকম সিদ্ধান্ত আগেও একবার দিয়েছিল। তবে কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই ডলারের দাম ৯৫ টাকায় ধরে রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যা বলছে, তা নিজেই কার্যকর করছে না। বাজারে ডলারের চাহিদা অনেক বেশি, সরবরাহ কম। তাই দাম বেশি হবে—এটাই বাস্তবতা। এটাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলারের যে দাম, এটা প্রশাসনিক দর। এই দামে কিছু ডলার বিক্রি হয়। সরকারি আমদানি বিল মেটানো হয়। আর এই দামে কিছু সাধারণ মানুষকেও ঠকানো হয়। ছোট রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এই দামে পায় ব্যাংক। তবে বড় ব্যবসায়ীরা রপ্তানি আয়ে ঠিকই ১১০ টাকা দাম পাচ্ছেন। আমদানিতেও গুনতে হচ্ছে ১০৬-১০৭ টাকা।

আরও পড়ুন

৯৫ টাকা দাম ধরে রেখে ডলারের সংকট কাটানো যাবে না। সত্যি সত্যি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের দাম বাজারের সমান হলে সংকট এত দিন কেটে যেত। তা ছাড়া সুদহারও একটা বিষয়। এখনো ৯ শতাংশ সুদহার ধরে রাখা হয়েছে। এর ফলে ঋণ বেশি যাচ্ছে, ডলার কিনতে কারও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারও গায়ে লাগছে না।

আমরা শুধু আমদানি-রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের দিকে তাকাচ্ছি। শিক্ষা, চিকিৎসা, জাহাজভাড়া, প্রযুক্তি ও সেবা খরচও আমাদের দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ আছে। চলতি বছরে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার শোধ দিতে হবে।

ফলে সামগ্রিক চিত্র পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেসব সিদ্ধান্ত টেকসই হবে, সে রকম সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কাউকে দোষারোপ করে, শাস্তি দিয়ে পরিস্থিতির উত্তরণ করা যাবে না। ঋণের সুদহার বাড়ালে ডলারের ওপর চাপ এমনিতেই কিছুটা কমে যেত। কারণ, তখন অনেকেই বেশি সুদে আমদানি করতে চাইতেন না।

এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনাবেচার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনছে। এ কারণে বিদেশি ব্যাংকগুলো সতর্ক হয়ে যাচ্ছে। ঋণসীমা কমিয়ে আনছে, সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তারা এখন ভাবছে সম্পর্ক না রাখাই ভালো। কারণ, তাদের দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধরছে। না জানি ভেতরে কী অবস্থা। এমনটা হলে আমদানি খরচ আরও বেড়ে যাবে। ডলারের দামের কারণে এমনিতেই খরচ বেড়ে গেছে। যার বড় প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতিতে।

আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট