রেস্তোরাঁয় রোবটের ব্যবহার, কর্মীদের কী বার্তা দিচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলোর একটি চিপোলি মেক্সিকান গ্রিল তাদের একটি শাখায় রোবটের মাধ্যমে টর্টিলা চিপস তৈরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। সুইটগ্রিন নামের আরেকটি রেস্তোরাঁ তাদের দুটি শাখায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সালাদ তৈরিতে রোবট ব্যবহার করছে। আর অপর রেস্তোরাঁ স্টারবাকস রোবটের মাধ্যমে কফি তৈরি করছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে অটোমেশনের প্রভাবে নানা শিল্পে চাকরি হারানোর কথা জোরেশোরে এখন আলোচনায়। ঠিক এমন এক সময়ে রেস্তোরাঁগুলোর অটোমেশনের এই বার্তা খাবারের দোকানে কর্মরত শ্রমিকদের নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে। এখন দেখার বিষয়, রোবটের মাধ্যমে বাস্তবে খাবার–দাবার তৈরি কতটা বাস্তবসম্মত। যদি সেই চেষ্টা সফল হয় তাহলে রেস্তোরাঁ কর্মীদের চাকরিতে কী প্রভাব পড়বে তা এখন দেখার বিষয়।
বৈশ্বিক গণমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর রেস্তোরাঁশিল্পে রোবটের ব্যবহার এ খাতে ঝাঁকুনি তৈরি করেছে। তাতে এ খাতের শ্রমিকেরা কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, কর্মীদের হটিয়ে রেস্তোরাঁয় রোবট জায়গা করে নিতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। তাই এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
এ বিষয়ে টেকনোমিক নামক রেস্তোরাঁ গবেষণা সংস্থার প্রিন্সিপাল ডেভিড হেনকেস বলেন, শিল্প খাতে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু রেস্তোরাঁ খাত এখনো অত্যন্ত শ্রমঘন ও শ্রমচালিত শিল্প হিসেবেই পরিচিত।
এদিকে মহামারির আগে রেস্তোরাঁ খাত কর্মীদের আকর্ষণ করতে এবং তাঁদের কাজে ধরে রাখতে লড়াই করছিল। করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকট এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, তখন অনেক কর্মী ছাঁটাই হয়ে যায়। তাঁরা তখন অন্য কাজে নিযুক্ত হন এবং পরে আর ফিরে আসেনি। দেশটির রেস্তোরাঁ সমিতির তথ্যানুসারে, কর্মীঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে তিন-চতুর্থাংশ রেস্তোরাঁ। ফলে রেস্তোরাঁগুলো তাদের সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে পারছে না। এই সংকট থেকে রোবটের ব্যবহার বেড়েছে।
এর মধ্যে শ্রমিকদের আকর্ষণ করতে মজুরি বৃদ্ধি করেছিল অনেক রেস্তোরাঁ। কিন্তু ঠিক এই সময়ে খাবারের খরচ কমে গিয়ে রেস্তোরাঁর মুনাফার অঙ্ক কমে আসে। এতে রেস্তোরাঁগুলোর পক্ষে টিকে থাকারও চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
অটোমেশনের কাজ করে এমন স্টার্টআপগুলো রোবটের ব্যবহার তুলনামূলক অধিক সুবিধাজনক হিসেবে রেস্তোরাঁমালিকদের সামনে উপস্থাপন করছে। স্টার্টআপগুলোর দাবি, রোবটগুলো পরিশ্রমী কর্মচারীদের চেয়ে ভালোভাবে বার্গার পরিবেশন করতে পারে। পিৎজা বানাতেও তাদের জুড়ি নেই। আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটারগুলো আরও সঠিকভাবে ক্রয়াদেশ নিতে পারবে।
পিচবুক অনুসারে, চলতি বছর মিসো রোবোটিকস থেকে অনেকগুলো রেস্তোরাঁর অটোমেশনের ঘোষণা এসেছিল। তারা কোম্পানিটিকে ১০৮ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহে সহায়তা করেছে। একই সঙ্গে কোম্পানিটির আর্থিক মূল্যমান দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
মিসো রোবোটিকসের সবচেয়ে চটকদার আবিষ্কার হচ্ছে রোবট ফ্লিপি, যা বার্গার ফ্লিপ করতে ও মুরগির ডানা (চিকেন উইংস) মচমচে করে ভাজতে পারে। এই রোবট মাসে প্রায় ৩ হাজার ডলারে ভাড়াও পাওয়া যায়।