বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন
প্রশ্ন শুনে খেপলেন, এড়িয়ে গেলেন, আবার হাসিমুখে উত্তরও দিলেন অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট-পরবর্তী প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এসে অম্লমধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর। সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্ন শুনে তিনি খেপে যান। খেপে গিয়ে তিনি কখনো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, কখনোবা এড়িয়ে গেছেন। আবার কখনো হাসিমুখে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।
জাতীয় সংসদে গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। রীতি অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার পরদিন আজ শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও এনবিআর চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিকবার মেজাজ হারান অর্থমন্ত্রী। যেমন একপর্যায়ে একজন সাংবাদিক কালোটাকা বৈধ করা নিয়ে জানতে চান। ওই সাংবাদিক বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন যে কালোটাকা দেশের বাইরে চলে যায়। এ ছাড়া আমাদের ব্যাংকিং খাতেও সুশাসনের অভাব রয়েছে। এই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ বা বার্তা বাজেট বক্তব্যে দেখিনি। আর্থিক অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কেন বার্তা দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে আপনার (অর্থমন্ত্রী) ওপরে কী কোনো চাপ আছে?’
প্রশ্নটি শুনে খেপে যান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা তো খোলাখুলিভাবে এ বিষয়ে বলেছি, কোনো রাখঢাক রাখিনি। তাহলে আপনি খালি ঘুরেফিরে ওই একই কথায় যাচ্ছেন কেন, এটা তো বুঝতে পারলাম না। এটা কী, কীভাবে প্রশ্ন করতে হয়, সেটা তো শিখতে হবে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এটা কোনো জার্নালিজম নয়। খালি এক কথাই ঘুরেফিরে আসে। আর অতি সরলীকরণ করা হয়। এভাবে তো সমাজ-সংসার চলে না। কোথাও চলে না। আপনারা দেখেন, দেখে একটু শেখেন, তাহলে আমাদেরও কাজ করতে সুবিধা হবে।’
মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বাজেটের আকার ছোট হয়ে গেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, এমন অপরিপক্ব ও সরলীকরণ প্রশ্ন তিনি আশা করেননি।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ গোঁজামিলে ভরপুর উল্লেখ করে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা একটা অগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধনি যন্ত্রাংশ ও নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে যে শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা ছিল, তা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে মূলধনি যন্ত্রাংশ ও নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে এখন কোনো শুল্ক নেই। এই রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে নতুন বাজেটে ১ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক সাংবাদিক বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে সরকার গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুবিধা দেয় না। আর অর্থনৈতিক অঞ্চলের অভ্যন্তরে এখন শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এই অবস্থাকে অনেক ব্যবসায়ী ‘ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির’—এমন অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এমন কথা শুনে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোন ব্যবসায়ী এমন বলেছেন। এফবিসিসিআই ও ডিসিসিআইয়ের ব্যবসায়ীরা তো এমন অভিযোগ করছেন না। তাঁরা বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, বাজেট ভালো হয়েছে। আপনারা (সাংবাদিকেরা) তাঁদের বিবৃতি কি পড়েননি।
আর সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের পরিপক্বতা নিয়েও কথা বলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের গতকাল বাজেট বই দেওয়া হয়েছে, সেটি না পড়েই অনেকে এখানে প্রশ্ন করতে চলে এসেছেন। তবে সংবাদ সম্মেলনের অনেক প্রশ্ন বেশ সংগতিপূর্ণ ছিল বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।