ইতালি আলোচিত প্রযুক্তি চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করেছে
প্রথম ইউপোরীয় দেশ হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করেছে ইতালি। দেশটির সরকারি তথ্য সুরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, ডিজিটাল দুনিয়ায় তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশ্যে চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইতালির তথ্য সুরক্ষা সংস্থা চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে গোপনীয়তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তারা অনতিবিলিম্বে চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করবে বলে জানিয়েছে। খবর বিবিসির।
ইতালির তথ্য সুরক্ষা সংস্থা বলেছে, তারা শুধু চ্যাটজিপিটির মূল প্রতিষ্ঠান ওপেন এআইয়ের চ্যাটবট ব্লক করেই ক্ষান্ত হবে না, বরং এটি সাধারণ তথ্য–উপাত্ত সুরক্ষার নিয়মকানুন মেনে চলছে কি না, তা–ও তদন্ত করবে।
সংস্থাটি বলেছে, কার্যক্রম চালাতে ও অ্যালগরিদম সচল রাখতে ব্যাপকভাবে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে চ্যাটজিটিটি, যার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। অ্যাপ ব্যবহারকারীদের বয়স কত, তা–ও যাচাই করার উপায় নেই।
এই পরিপ্রেক্ষিতে চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, এটি অপ্রাপ্তবয়স্কদের সচেতনতা ও বিকাশের দিকে খেয়াল না রেখে এমন অনেক উত্তর দেয়, যাতে তাদের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে গুগলের বার্ড, যদিও এই চ্যাটবট শুধু ১৮ ঊর্ধ্ব বয়সীরা ব্যবহার করতে পারেন।
ইতালির তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই সব অভিযোগ খণ্ডানোর জন্য ওপেন এআইয়ের হাতে ২০ দিন সময় আছে। যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ডলার বা বার্ষিক রাজস্বের ৪ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
ইতিমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা চ্যাটজিপিটির মতো প্রযুক্তির সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা। বলা হচ্ছে, এই প্রযুক্তি শুধু মানুষের চাকরির জন্য হুমকি নয়, বরং তা ভুল তথ্য ও পক্ষপাত ছড়িয়ে দিতে পারে, এমন ঝুঁকিও আছে।
এদিকে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ইলন মাস্কসহ প্রযুক্তি খাতের গুরুপ্তপূর্ণ ব্যক্তিরা এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই লড়াই নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ইতালির কনজ্যুমার অ্যাডভোকেসি গ্রুপের (বিইইউসি) উপমহাপরিচালক উরসুলা পাচাল সতর্ক করে বলেন, এআই যেসব ক্ষতি করতে পারে, তা থেকে বর্তমান সমাজ যথেষ্ট সুরক্ষিত নয়। চ্যাটজিপিটি ও এর মতো অন্যান্য চ্যাটবট কীভাবে মানুষকে প্রতারিত ও প্রভাবিত করতে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। সে জন্য এআই ব্যবস্থা আরও যাচাই করা উচিত।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটি চালু হয়। ইতিমধ্যে কয়েক কোটি মানুষ এটি ব্যবহার করেছে। চ্যাটজিপিটি ইন্টারনেটের তথ্যভান্ডার (২০২১ সাল পর্যন্ত) ব্যবহার করে মানুষের মতো করে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, লেখার শৈলীও অনুসরণ করতে পারে।
মাইক্রোসফট এই প্রযুক্তিতে কয়েক শ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্চ ইঞ্জিন বিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চ্যাটজিপিটি। এ ছাড়া শিগগিরই এটি মাইক্রোসফটের অফিস প্যাকেজের অ্যাপগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইতালির এ সিদ্ধান্তের পর আয়ারল্যান্ডও নড়েচড়ে বসেছে। দেশটির তথ্য সুরক্ষা কমিশন বিবিসিকে বলেছে, ইতালির কর্তৃপক্ষ ঠিক কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করবে।
ইতালি প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করলেও চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া আগেই তা নিষিদ্ধ করেছে।
এ বিষয়ে বিবিসি ওপেন এইআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা মন্তব্য করেনি।