আরও দুর্বল রুশ মুদ্রা রুবল, ৪ মাসে ২৪ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে ডলার ও ইউয়ানের বিপরীতে
রাশিয়ার মুদ্রা রুবল আরও দুর্বল হয়েছে। আগস্ট মাসের শুরু থেকে রুবল দুর্বল হতে শুরু করে এবং মার্কিন ডলার ও চীনা ইউয়ানের বিপরীতে এখন পর্যন্ত ২৪ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। রুশ মুদ্রার এই পতন অর্থনীতিবিদদের হতবিহ্বল করেছে; কারণ, তাঁদের প্রত্যাশা ছিল ডলারের বিপরীতে রুবল শক্ত অবস্থানে থাকবে।
নভেম্বরের শুরুতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক জরিপে পেয়েছিল যে এক বছরের মধ্যে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১০০ রুবল পাওয়া যাবে। কিন্তু বুধবার রুবলের দাম শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ পড়ে যায়, ফলে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ১০৬ দশমিক ৪০ রুবল। গত সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে রুবলের দাম ৩২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়।
চীনা মুদ্রা ইউয়ানের বিপরীতে রুবলের দাম বুধবার শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ কমেছে। প্রতি ইউয়ানে এখন ১৪ দশমিক ৭৪ রুবল পাওয়া যাচ্ছে। ২০২২ সালের মার্চের পর রুবলের দাম এখন সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে।
রুবলের সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার শেয়ারবাজারেরও পতন হচ্ছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারের সূচক কমেছে ২০ শতাংশ। রাশিয়ার বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে অর্থ তুলে ব্যাংকে রাখছেন; কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হারের চেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে এসব ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঞ্চমার্ক সুদের হার এখন ২১ শতাংশ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রুবলের দাম কমে যাওয়ার ফলে কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেয়, আর্থিক বাজার এখন সেদিকে তাকিয়ে আছে। রুবলের দাম কমার পেছনে ‘একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি’ রয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
রুবলের দাম কমার কারণে রাশিয়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করেছিল, দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার তার চেয়ে বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৩ সালের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল সুদের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠানো হয়েছে। সংকোচনমূলক এই নীতি নেওয়ার পরও দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমছে না।
অনেক বিশ্লেষক ধারণা করছেন যে বছর শেষে রুবলের দাম আরও কমবে। তখন প্রতি ডলারের দাম বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ রুবল পর্যন্ত উঠতে পারে। বিশ্লেষকদের অনেকে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করছেন। বৈদেশিক মুদ্রা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে রপ্তানিকারকদের বাধ্য করা এবং রাষ্ট্র যাতে আরও কম পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা কেনে, তা নিশ্চিত করতে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
রাশিয়ার আর্থিক খাতের ওপর যে নতুন দফার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তা রুবলের পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর ফলে বিদেশি বাণিজ্যের বিপরীতে লেনদেন আরও কঠিন হয়েছে। বিশেষ করে তেল ও গ্যাসের বাণিজ্য ঝামেলায় পড়েছে। ফলে রুশ আর্থিক বাজারে মুদ্রার সংকট দেখা দিয়েছে।
রাশিয়ার বেশির ভাগ প্রধান প্রধান ব্যাংক এখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। ফলে তারা ডলারে ব্যাংক লেনদেন করতে পারছে না। যদি তারা বিপুল পরিমাণে নগদ ডলার দেশে নিয়ে আসতে পারে, তাহলেই কেবল এসব ব্যাংক বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন করতে পারছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ও নতুন দফার আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ছাড়া রুবলের দাম কার আর কোনো মৌলিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বেশির ভাগ বিশ্লেষক। রাশিয়ার প্রধান রপ্তানি পণ্য তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানব অবশ্য মনে করেন, রুবল দুর্বল হওয়ার কারণে রপ্তানিতে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
রুবলের দাম কমার কারণে রুশ সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে। কারণ, সরকার আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ জ্বালানি কর ও রপ্তানি শুল্ক আদায় করতে পারছে।