স্টক এক্সচেঞ্জের ৩৫% শেয়ার পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ
দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার দ্রুত শেয়ারবাজারে আনার উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটি আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ৩৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে। বিএসইসিতে গতকাল সোমবার দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ৩৫ শতাংশ শেয়ার আট বছর ধরে ব্লক হিসাবে পড়ে আছে। স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণ বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, এসব শেয়ার সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ৩৫ শতাংশ শেয়ার আট বছর ধরে ব্লক হিসাবে পড়ে আছে। এসব শেয়ার পুঁজিবাজারে আনার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা-ও কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণ বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, এসব শেয়ার সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে।
ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদে শেয়ারধারীদের জন্য যে চারটি পদ সংরক্ষিত আছে, সেগুলোতে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পুরোনো সদস্যরাই ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণ শেয়ারধারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রি না হওয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরে থেকে কারও পর্ষদে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হচ্ছে না।
২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসের পর সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের উদ্যোগ নেয়। ২০১৩ সালে সেটি বাস্তবায়িত হয়। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। কারণ, স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারের বড় একটি অংশ এখনো অবিক্রীত রয়েছে। ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদে শেয়ারধারীদের জন্য যে চারটি পদ সংরক্ষিত আছে, সেগুলোতে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পুরোনো সদস্যরাই ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণ শেয়ারধারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রি না হওয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরে থেকে কারও পর্ষদে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হচ্ছে না।
দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানাসংক্রান্ত মোট শেয়ার প্রতিষ্ঠান দুটির সদস্যদের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করা হয়। সদস্যদের জন্য ৪০ শতাংশ শেয়ার সংরক্ষিত। বাকি ৬০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ কৌশলগত বিনিয়োগকারী ও ৩৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত।
ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩৫ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ রাখা হলেও এসব শেয়ার বিক্রির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া নেই। তাই ২০১৩ সালে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন কার্যকর হওয়ার আট বছর পরও সংরক্ষিত শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) তো গত আট বছরে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ২৫ শতাংশ শেয়ারও বিক্রি করতে পারেনি। ফলে সিএসইর ৬০ শতাংশ শেয়ার ব্লক হিসাবে পড়ে আছে। আর ডিএসইর ব্লক হিসাবে অবিক্রীত আছে ৩৫ শতাংশ শেয়ার।
জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সংরক্ষিত শেয়ার আমরা দ্রুত বাজারে আনতে চাই। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়ার জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব শেয়ারবাজারে না আসায় ডিমিউচুয়ালাইজেশনের বাস্তবায়নও আটকে রয়েছে।
ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানাসংক্রান্ত মোট শেয়ার প্রতিষ্ঠান দুটির সদস্যদের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করা হয়। সদস্যদের জন্য ৪০ শতাংশ শেয়ার সংরক্ষিত। বাকি ৬০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ কৌশলগত বিনিয়োগকারী ও ৩৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত।
এখন ব্লক হিসাবে থাকা বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা-ও পাবেন এসব শেয়ারধারী সদস্য। বর্তমানে ব্লক হিসাবে থাকা ৩৫ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতেও সদস্যরা ঘোষিত লভ্যাংশ পাচ্ছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ২৫ শতাংশ শেয়ার চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত জোটের কাছে বিক্রি করেছে। এখন বাকি আছে শুধু সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ৩৫ শতাংশ শেয়ার। অন্যদিকে সিএসই এখনো কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি। ফলে সংস্থাটির কাছে আইনগত বাধ্যবাধকতার আওতায় বিক্রয়যোগ্য ৬০ শতাংশ শেয়ারের পুরোটাই অবিক্রীত রয়ে গেছে।
কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির আগে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করা যাবে কি না, এ নিয়ে অবশ্য সিএসই কর্তৃপক্ষ সন্দিহান। তবে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের ১৪ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত শেয়ার বিক্রি ব্যতিরেকে ব্লক হিসাবে সংরক্ষিত অবশিষ্ট শেয়ার জনগণ বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির প্রস্তাব করতে পারবে বিএসইসি।
দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়টি আইনে উল্লেখ থাকলেও কত বছরের মধ্যে তা করতে হবে, সে জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। আবার কী পদ্ধতিতে এসব শেয়ার বিক্রি করা হবে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিক্রি করা যাবে কি না ইত্যাদি বিষয়েও আইনে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। তাই স্টক এক্সচেঞ্জ দুটির কর্মকর্তারা বলছেন, ব্লক হিসাবে থাকা ৩৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য আলাদা বিধিবিধান করতে হবে। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষেই বিধিবিধান করতে হবে। গতকালের বৈঠকের পর দ্রুত এ বিধিবিধান তৈরি করে বিএসইসিতে জমা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করা হবে বলে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান। তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে তাঁরা কিছু বলতে রাজি হননি।
এদিকে ২০১৮ সালে চীনের দুটি এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত জোটের কাছে প্রায় হাজার কোটি টাকায় ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করা হয়। এসব শেয়ারের প্রতিটি ২১ টাকা দামে বিক্রি করা হয়। শেয়ার বিক্রির সেই টাকা ইতিমধ্যে ডিএসইর শেয়ারধারী সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এখন ব্লক হিসাবে থাকা বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা-ও পাবেন এসব শেয়ারধারী সদস্য। বর্তমানে ব্লক হিসাবে থাকা ৩৫ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতেও সদস্যরা ঘোষিত লভ্যাংশ পাচ্ছেন। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ডিএসইর শেয়ারধারীদের জন্য ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদনের পর এ লভ্যাংশ শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।