বৈদ্যুতিক গাড়িতে নতুন সম্ভাবনা

জাপানের টয়োটাসহ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে গাড়ি উৎপাদনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সে জন্য নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে।

কার্বন নিঃসরণ কমাতে আগামী ১০ বছরের মধ্যে জ্বালানি তেলের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক গাড়ির জগতে প্রবেশ করবে অটোমোবাইল শিল্প। দুনিয়ার বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির এই গাড়ি উৎপাদনে বিনিয়োগ শুরু করেছে। বাংলাদেশকেও বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে জোর দিতে হবে। জ্বালানি তেলের ইঞ্জিনের গাড়ি উৎপাদনের পথে হাঁটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

দেশের অটোমোবাইল খাত নিয়ে গতকাল বুধবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই অভিমত দেন। তাঁরা বলেন, জাপানি রিকন্ডিশন্ড বা একবার ব্যবহৃত গাড়ি আমদানির সুযোগ রেখেই দেশে গাড়ি উৎপাদনে যেতে হবে। আমদানি ও দেশে উৎপাদিত গাড়ির শুল্কহারেও সামঞ্জস্য আনা প্রয়োজন।

আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এতে দেশের অটোমোবাইল শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আবদুল হক। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

দেশে গাড়ি উৎপাদনের জন্য অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। সেখানে প্রাথমিকভাবে জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি বন্ধের কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বারভিডা তীব্র আপত্তি জানায়। গতকালের আলোচনায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হয়। অবশ্য শুরুতেই বারভিডার নেতারা জানান, নীতিমালায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি বন্ধের বিষয়টি বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

গাড়ি উৎপাদনের জন্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা সব সময়ই বড় ভূমিকা রাখে। সে কারণে কয়েকটি দেশের উদাহরণ দিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে গাড়ির বাজার খুবই ছোট। ২০১৭ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি হাজারে গাড়ি কেনেন মাত্র তিনজন। সর্বশেষ ২০১৯–২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৪ হাজার ৭০২টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডে বছরে ১৯ লাখ গাড়ি উৎপাদন হয়। এর মধ্যে দেশটির স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হয় ১১ লাখ গাড়ি। বাকিটা রপ্তানি হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের চেয়ে বাজার ১০ গুণ বড় হলেও গাড়ি উৎপাদনে সফল হতে পারেনি পাকিস্তান। আবার বিদেশি কোম্পানির হাত ধরে অটোমোবাইল খাতে প্রবেশ করা ভারত গাড়ি উৎপাদনে সফল হয়েছে তাদের বাজার বড় হওয়ার কারণে। তারপরও বিপুল পরিমাণ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয় দেশটিতে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের নতুন প্রযুক্তিতে যাচ্ছে সবাই। এটাই আমাদের জন্য বড় সুযোগ। কারণ, আমরা গাড়ি উৎপাদনে বর্তমানে জিরোতে আছি।
সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা

আহসান এইচ মনসুর বলেন, অত্যধিক শুল্কের কারণে দেশে গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে না। বর্তমানে আমদানি হওয়া গাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার শুল্ক পায় সরকার। গাড়ির ব্যবহার বাড়ানো গেলে এটি ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা সম্ভব। গাড়ি উৎপাদনে যাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়েও চিন্তা করতে হবে। এ জন্য সমন্বিত নীতিমালা প্রয়োজন।

আশপাশের বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব গাড়ি আসছে, তা জাপানের চেয়ে নিম্নমানের, এমন মন্তব্য করেন বারভিডার সভাপতি আবদুল হক। তিনি বলেন, পুরোনো প্রযুক্তির গাড়ি উৎপাদন যেন না হয়। অন্যদিকে ৪৫ বছর ধরে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির যে ব্যবসা গড়ে উঠেছে, সেটি যেন অব্যাহত থাকে। কারণ, খাতটির সঙ্গে অনেকের কর্মসংস্থান যুক্ত।

আবার গাড়ি উৎপাদনে যেতে হলে যন্ত্রাংশ সরবরাহের শক্তিশালী সংযোগ শিল্প থাকা প্রয়োজন। সেখানে বাংলাদেশ প্রাথমিক স্তরেও যেতে পারেনি বলে মনে করেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের পর জ্বালানি তেলের গাড়ি থাকবে না।

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘টয়োটাসহ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে বাংলাদেশে গাড়ি উৎপাদনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা আমাদের কাছে নীতিমালা পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছে। আমি তাদের বলেছি, তোমরা পুরোনো গাড়ি উৎপাদনে এলে আমি কিছুই করতে পারব না। যদি বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন করো, তাহলে কী চাও আমাদের বলো। প্রয়োজনে আমি তোমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাব। যে সুবিধা চাও, আমরা দেব।’

সালমান এফ রহমান আরও বলেন, ‘বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের নতুন প্রযুক্তিতে যাচ্ছে সবাই। এটাই আমাদের জন্য বড় সুযোগ। কারণ, আমরা গাড়ি উৎপাদনে বর্তমানে জিরোতে আছি।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, এনবিআরের সদস্য সৈয়দ গোলম কিবরিয়া, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনেয়ারুল আলম প্রমুখ।