প্রতি মাসে সোনার দাম হাজার টাকা বেড়েছে
ভালো মানের একটি সোনার অলংকারের ভরি ৬০ হাজার ৩৬১ টাকা। দামটা শুনেই জুয়েলার্স দোকানের দিকে ছুটবেন না। ঠিক এক বছর আগে এই দামে সোনার অলংকার বিক্রি হয়েছে। তারপর দামি এই ধাতুটির ওপর দিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা গেছে। সেটির কারণে বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলংকার কিনতে লাগবে ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। গত বছরের ৬ আগস্ট দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায় দাঁড়ায়। এটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম।
ঝড়ঝাপটা কথা যেহেতু এল তাহলে শুনুন সেটি কতটা ভয়াবহ ছিল। ২০১৯ সালের প্রথম দিন সোনার ভরি ছিল ৫৯ হাজার ১৯৫ টাকা। চার দিনের মাথায় তা বেড়ে হয় ৬০ হাজার ৩৬১ টাকা। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪ বার দেশের বাজারে সোনার দাম পরিবর্তন হয়েছে। তার মধ্যে আটবার বেড়েছে, কমেছে ছয়বার। শেষ পর্যন্ত প্রতি ভরির দাম বেড়েছে ১২ হাজার ৩০৬ টাকা। সেই হিসাবে গত বছর প্রতি মাসে সোনার দাম গড়ে ১ হাজার টাকার বেশি বেড়েছে।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। গত বছরের ৬ আগস্ট দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায় দাঁড়ায়। এটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। আর সর্বনিম্ন দাম? ১৯৭১ সালে সোনার ভরি ছিল ১৬০ টাকা। আর স্বাধীনতার আগের বছর সোনার ভরি ছিল ১৫৪ টাকা।
এ বছরের ২৭ জুলাই প্রথম ৯ বছরের রেকর্ড ভাঙে স্বর্ণের দাম। সেদিন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (১ আউন্স সমান ২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) সোনার দাম বেড়ে হয় ১ হাজার ৯৪৪ ডলার।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের লকডাউন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনা, বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের অস্থিরতা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ডলারের দাম কমে যাওয়ায় গত বছরের শুরু থেকে বিনিয়োগকারীরা সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ বলে মনে করছেন। তাতে সোনার চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। এ বছরের ২৭ জুলাই প্রথম ৯ বছরের রেকর্ড ভাঙে স্বর্ণের দাম। সেদিন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (১ আউন্স সমান ২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) সোনার দাম বেড়ে হয় ১ হাজার ৯৪৪ ডলার। এর আগে ২০১১ সালে প্রতি আউন্স সোনার দাম উঠেছিল ১ হাজার ৯২১ ডলারে। এরপর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম, আগস্টে দামে হয় নতুন রেকর্ড। প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৭২ ডলার ৫০ সেন্ট পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর কিছুটা কমতে থাকে দাম।
বছরের শেষ দিকে সোনার বাজার স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা প্রকাশ করলেও সেটি হয়নি। গত বছরের জানুয়ারির শুরুতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৫২৪ ডলার। বর্তমানে প্রতি আউন্সের দাম ১ হাজার ৯৪৭ ডলার।
জানা যায়, দেশে বছরে ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার কেজি সোনার চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে ১০ শতাংশ পুরোনো সোনার অলংকার গলিয়ে সংগ্রহ করা হয়। বাকি ৯০ শতাংশ সোনা ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে আসে। স্বর্ণ নীতিমালার আলোকে ২০১৯ সালে ১৯ প্রতিষ্ঠানকে সোনা আমদানির ডিলার লাইসেন্স দেওয়া হয়। তারপরও বৈধভাবে সোনা আমদানি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে। মূল ভরসা ব্যাগেজ রুলসের আওতায় বিদেশ থেকে আসা সোনা। সে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশে সোনার দাম ভরিতে প্রায় সব সময়ই ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি থাকে।
সোনার দাম বাড়ার কারণে অনেকে হা-হুতাশ করলেও অনেকের জন্য তা শাপেবর হয়েছে। সে জন্য সোনার দাম যখন এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছেছিল তখন অনেকেই পুরোনো অলংকার বিক্রি করে মুনাফা করেছেন। এখনো দাম অনেক বেশি। দাম আরও বাড়বে কি না, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে দেশে-বিদেশে মূল্যবৃদ্ধির নানা পূর্বাভাস কিন্তু আছে। আর্থিক পরিকল্পনাকারীরা বলছেন, নতুন বছরে বিনিয়োগকারীদের সোনার ওপর বরাদ্দ কমতে পারে। কারণ, এ বছরের শেষে দাম কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হতাশ। অধিক লাভের আশায় হয়তো শেয়ারের দিকে ঝুঁকতে পারেন তাঁরা। আবার কিছু বিশ্লেষক বলছেন, আগামী বছরের প্রথম তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে ২ হাজার ডলারে উঠে যেতে পারে। আরেক দল বিশ্লেষক বলছেন, ২০২১ সালে দাম ঊর্ধ্বমুখী হবে।