সরকারকে মিলমালিকেরা
দাম না বাড়ালে চাল নয়
আমনে নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিপ্রতি ৪ টাকা বেশি চান চালকলের মালিকেরা। খাদ্য মন্ত্রণালয় রাজি নয়।
আমদানি করে মজুত বাড়াবে সরকার।
এক লাখ টনের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান।
মজুত কমে ৫ লাখ ৭৭ হাজার টনে নেমেছে।
বোরো মৌসুমের পর আমনেও ধান-চাল সংগ্রহ নিয়ে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। সরকারি গুদামে চাল দিতে কেজিপ্রতি চার টাকা বেশি চান চালকলের মালিকেরা। বাড়তি দাম না পেলে তাঁরা সরকারকে চাল দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
অবশ্য সরকার আগের মতোই অনঢ়। খাদ্য মন্ত্রণালয় চালের দাম বাড়াবে না। প্রয়োজনে আমদানি করে চালের মজুত বাড়াবে তারা। এরই মধ্যে চলতি মাসে খাদ্য অধিদপ্তর এক লাখ টন চাল আমদানির দুটি দরপত্র আহ্বান করেছে। প্রয়োজনে আরও কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েও রেখেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ৫০ হাজার টন চাল সরবরাহে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমাও দিয়েছে। অন্যদিকে ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে বাংলাদেশকে চাল সরবরাহের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয়কে বিবেচনায় নিয়ে। মাত্র আমন ধান ওঠা শুরু হয়েছে। ধানের দাম আরও কমবে। তখন সরকার–নির্ধারিত দরে চাল সরবরাহ করলে মিলের মালিকেরা লাভবান হবেন।
মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ভারত থেকে আমদানি করলে দেশে আসার পর শুল্কসহ প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৩৪ টাকা। থাইল্যান্ড থেকে আমদানিতে পড়বে কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারওয়ার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয়কে বিবেচনায় নিয়ে। মাত্র আমন ধান ওঠা শুরু হয়েছে। ধানের দাম আরও কমবে। তখন সরকার–নির্ধারিত দরে চাল সরবরাহ করলে মিলের মালিকেরা লাভবান হবেন।
এ বছর খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ২ লাখ মেট্রিক টন ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চালকলের মালিকেরা চান, সরকার সেদ্ধ চালের দাম প্রতি কেজি ৪১ টাকা নির্ধারণ করুক। গত মঙ্গলবার নওগাঁয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন চালকলের মালিকেরা। সূত্র জানায়, বৈঠকে দাম বাড়ানোর দাবি ওঠে। অবশ্য সরকার জানিয়ে দেয়, দাম বাড়ানো সম্ভব নয়। পরদিন (গত বুধবার) বগুড়ায় চালকলের মালিকেরা কেন্দ্রীয়ভাবে আরেকটি বৈঠক করেন। সেখানে বেশির ভাগ মালিক সরকারকে চাল না দেওয়ার পক্ষে মত দেন।
বাংলাদেশ অটো, মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে, ‘২৬ টাকা কেজি দরে ধান কিনলে প্রতি কেজি চালে খরচ পড়ে ৪১ টাকা। আমরা সরকারের কাছে শুধু খরচই চেয়েছি, লাভ চাইনি। তারপরও সরকার রাজি নাহলে আমরা কীভাবে চাল দেব?’
বাংলাদেশ অটো, মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে, ‘২৬ টাকা কেজি দরে ধান কিনলে প্রতি কেজি চালে খরচ পড়ে ৪১ টাকা। আমরা সরকারের কাছে শুধু খরচই চেয়েছি, লাভ চাইনি। তারপরও সরকার রাজি নাহলে আমরা কীভাবে চাল দেব?’
এদিকে সরকারি চালের মজুতও কমতির দিকে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দুই মাসের মধ্যে চালের মজুত ১০ লাখ টন থেকে কমে ৫ লাখ ৭৭ হাজার টনে নেমেছে। গত বছর এ সময়ে সরকারের গুদামে প্রায় ১১ লাখ টন চাল ছিল।
সরকার গত বোরোতে ১৮ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল। যদিও মিলমালিকেরা সরকারকে চুক্তি অনুযায়ী চাল দেননি। ফলে শেষ পর্যন্ত সংগ্রহের সময় এক দফা বাড়িয়েও ১০ লাখ টনের বেশি চাল সংগ্রহ করা যায়নি। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারওয়ার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, কেউ চাল না দিলে আমদানি করে মজুত বাড়ানোর সুযোগ তো রয়েছেই।