চাল আমদানিতে শুল্কহার অর্ধেকের বেশি কমছে
অর্ধেকের চেয়েও বেশি কমছে চাল আমদানির শুল্ক। এত দিন চাল আমদানিতে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হলেও এখন তা দিতে হবে ২৫ শতাংশ। শুল্কহার কমছে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। নতুন শুল্কহারে চাল আমদানি করতে আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারবেন আমদানিকারকেরা।
আজ রোববার সকালে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সরকার কারও হুমকিতে মাথা নত করে না। মিলারদের চুক্তির জন্য পীড়াপীড়ি করিনি আমরা। তাঁরা তাদের হুমকি নিয়ে থাকুক। প্রয়োজন আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান বেশি করে কিনব। দরকার হলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল কিনব।
সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে চাল আমদানিতে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। এখন ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
দাম না বাড়ালে চাল না দেওয়ার বিষয়ে মিলারদের হুমকি প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কারও হুমকিতে মাথা নত করে না। মিলারদের চুক্তির জন্য পীড়াপীড়ি করিনি আমরা। তাঁরা তাদের হুমকি নিয়ে থাকুক। প্রয়োজন আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান বেশি করে কিনব। দরকার হলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল কিনব।’
কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার–নির্ধারিত মূল্য মণপ্রতি ১ হাজার ৪০ টাকা। আজও বাইরে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম কমলে আমরা কৃষকের জন্য হাহাকার করি। আবার চালের দাম বাড়লেও হাহাকার করি।’
সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘আমরা বেসরকারিভাবে ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানির যে অনুমতি দিয়েছি, তা থেকে কে কতটুকু আমদানি করতে পারবে, সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। কিন্তু বেশি আমদানি করা যাবে না। তাতে আবার কৃষক বঞ্চিত হবে।’
চালের দ্বিতীয় প্রধান মৌসুম আমনের ধান উঠলেও দাম তো কমেইনি, উল্টো বেড়েছে। গত বুধবার ভারতের সঙ্গে দেড় লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি করে সরকার। ভারতীয় চালের দাম পড়বে প্রতি কেজি ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা।
ঢাকার খুচরা বাজারে এখন মোটা গুটি ও স্বর্ণা চালের দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি। মাঝারি পাইজাম, বিআর-২৮-সহ বিভিন্ন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। আর সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ৬০ থেকে ৬৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
সরকারিভাবে চাল আমদানিতে বাড়তি জোর দেওয়ার কারণ খাদ্য অধিদপ্তরের গুদামে চালের মজুত গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। পরিমাণের দিক দিয়ে যা সাড়ে ৫ লাখ টন। ওদিকে চালকলের মালিকেরা ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে দাম প্রতি কেজি ৪১ টাকা না করলে নতুন আমন মৌসুমের চাল সরকারকে দিতে রাজি নন বলে হুমকি দিয়ে রেখেছেন।
ঢাকার খুচরা বাজারে এখন মোটা গুটি ও স্বর্ণা চালের দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি। মাঝারি পাইজাম, বিআর-২৮-সহ বিভিন্ন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। আর সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ৬০ থেকে ৬৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন মোটা চালের দাম প্রায় ৪৮ শতাংশ, মাঝারি ২৩ শতাংশ ও সরু চালের দাম ১৭ শতাংশ বেশি।
দেশে বছরে সাড়ে তিন কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখের মতো আসে আমন থেকে।
এ মৌসুমে খাদ্য মন্ত্রণালয় দেশের বাজার থেকে দুই লাখ টন ধান ও সাড়ে ছয় লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। গত ৭ নভেম্বর থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু করে গত বুধবার পর্যন্ত খাদ্য অধিদপ্তর চাল কিনতে পেরেছে ১৩ হাজার টনের মতো।